Sunday, September 20, 2020
যেভাবে পড়লে এক মাসেই ৪১তম বিসিএসে চান্স সম্ভব!
প্রিলির জন্য দশ ঘন্টা করে ৪৫ দিন পড়েছি — বিসিএসের পররাষ্ট্রে ৭ম আসিফ
Tuesday, September 1, 2020
যাদের লক্ষ্য #বিসিএস_৪১! - অধ্যয়ন ও করনীয়→
বিসিএস ম্যাথফোবিয়া | কী করবেন?
যারা প্রথমবার বিসিএস দিবেন তাদের জন্য
বিসিএস নিয়ে যা যা জানা প্রয়োজন: যারা প্রথমবার বিসিএস দিবেন তাদের জন্য: বিসিএস একটা দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা। সার্কুলার থেকে প্রিলি, রিটেন, ভাইভা, নিয়োগ পর্যন্ত ২.৫-৩ বছর সময় লাগে। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক টেনশন, হতাশা আসবে কিন্তু ধৈর্য ধরতে হবে। বিসিএস এর অনেকগুলো ধাপ: প্রিলি, রিটেন, ভাইভা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভেরিফিকেশন (পুলিশ, এনএসআই, ইউএনও, স্পেশাল ব্রাঞ্চ), গেজেট, পোস্টিং।
♦ ফরম পূরণ:— ১. টেকনিক্যাল ক্যাডার ও বোথ ক্যাডার। যারা শুধুমাত্র টেকনিক্যাল ক্যাডার দিবেন তাদের চয়েস একটাইঃ বিসিএস(স্বাস্থ্য), রসায়ন, গণিত ইত্যাদি। আর যারা বোথ ক্যাডার দিবেন তারা প্রথমে প্রশাসন, ফরেইন, পুলিশ, ট্যাক্স ইত্যাদি দিবেন, এরপর স্বাস্থ্য/নিজের সাবজেক্ট। ২. ফরম পূরনের সময় স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা একই দিলে ভালো। না হয় দুই জায়গায় ভেরিফিকেশন হবে। তবে স্থায়ী ঠিকানায় বাড়ি বা জমি থাকতে হবে। স্থায়ী ঠিকানা পরে পরিবর্তনের সুযোগ নাই। ৩. নাম, বাবার নাম, জন্মতারিখ ইত্যাদি এস এস সি সার্টিফিকেট অনুযায়ী দিতে হবে। ৪. স্নাতক লিখিত পরীক্ষা শেষ হলেই Appeared সার্টিফিকেট দিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা যায়।
♦ প্রিলিমিনারী পরীক্ষা: ১. প্রিলিতে সবার জন্য পাস মার্ক/কাট মার্ক একই। অর্থাৎ কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে যে ১০-১২ হাজার প্রিলিতে টিকবে আপনাকে এর মধ্যে একজন হতে হবে। এখানে কোনো ধরনের কোটা/আলাদা কাট মার্ক এপ্লাই করা হয় না, তাই সেই লেভেলের প্রস্তুতি নিতে হবে। ২. প্রিলি একটি বাছাই পরীক্ষা। এই নাম্বার পরবর্তীতে যোগ হবে না। তাই ১ম হয়ে প্রিলি পাস করা আর ১০,০০০ তম হয়ে প্রিলি পাস করা একই কথা।
♦ রিটেন পরীক্ষা: ১. যারা বোথ ক্যাডারে দিবেন তাদের জন্য পরীক্ষা হল ১১০০ নাম্বারের। আর যারা শুধুমাত্র ট্যাকনিকাল/শুধুমাত্র জেনারেল ক্যাডার তাদের ৯০০ নাম্বারের পরীক্ষা। ট্যাকনিকালদের বাংলা ২য় পত্র ও বিজ্ঞান পরীক্ষার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট ট্যাকনিক্যাল বিষয়ে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। বোথ ক্যাডারদের জেনারেল ক্যাডারের সব বিষয় সাথে নিজ বিষয়ের ২০০ নম্বরের পরীক্ষা। ২. লিখিত পরীক্ষা পাস নম্বর গড়ে ৫০%। সবাইকে অবশ্যই ৫০% মার্কস পেতে হবে ভাইভা দেওয়ার জন্য। আপনার ক্যাডারে যত সিটই থাকুক আপনি যদি রিটেনে ৫০% মার্কস না পান, তাহলে আপনি রিটেনে ফেল। তবে শুধুমাত্র ৫০% মার্কস ক্যাডার প্রাপ্তি নিশ্চিত করে না। যত বেশি মার্ক পাবেন রিটেনে তত ক্যাডার প্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়বে। ৩. রিটেন পরীক্ষায়ও কোন ধরনের কোটা/আলাদা কাট মার্ক এপ্লাই করা হয় না। ৪. কোনো পরীক্ষায় ৩০% এর কম পেলে ওই সাবজেক্টের নাম্বার যোগ হবে না। ৫. বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল লিখিত পরীক্ষা। এখানে যে যত বেশি পাবে, তার ক্যাডার পাওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়বে।
♦ ভাইভা: ১. ভাইভা পরীক্ষা ২০০ নম্বরের, পাস মার্ক ১০০। ভাইভা বোর্ডে ৩ জন পরীক্ষক থাকেন। ১ জন পিএসসির মেম্বার, বাকি দুজন বাইরের এক্সটারনাল। ২. যারা জেনারেল/বোথ ক্যাডারে ভাইভা দিবেন তাদের এক্সটারনাল যে কোন বিষয়ের হতে পারে। ৩. যারা শুধুমাত্র ট্যাকনিক্যাল ক্যাডারে ভাইভা দিবেন, তাদের বোর্ডে সংশ্লিষ্ট সাবজেক্টের দুইজন এক্সটারনাল থাকবেন। যেমনঃ স্বাস্থ্য দুজন ডাক্তার(যে কোন সাবজেক্টের), গণিতে দুই জন গণিতের শিক্ষক ইত্যাদি। ৪. ভাইভার উপর ক্যাডার প্রাপ্তি নির্ভর করে না। কারণ ভাইভাতে বেশিরভাগই পাস করে এবং এভারেজ একটা নাম্বার পায়। অল্প কিছু পরীক্ষার্থী খুব ভাল ভাইভা মার্কস পান। নিজেকে সাধারণ ভাবুন। ধরে নিন এভারেজ ভাইভা দিবেন, কিন্তু অসাধারন রিটেন দেওয়ার প্রস্তুতি নিন। ৫. কোনো ধরনের তদবির থেকে দূরে থাকুন। বিসিএস ই একমাত্র চাকুরি যা তদবির ছাড়া পাওয়া যায়। ৬. রিটেন ও ভাইভার প্রাপ্ত নাম্বার যোগ করে কোটা এপ্লাই করে চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়া হয়।
♦ স্বাস্থ্য পরীক্ষা: চূড়ান্ত ফলাফলের কিছুদিন পর অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ /ইন্সস্টিটিউট এ হয়। ওজন, উচ্চতা, প্রশ্রাব, চক্ষু ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সাধারণত কেউ বাদ পড়ে না।
♦ ভেরিফিকেশন: ১. পুলিশ, এনএসআই, ইউএনও, স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইত্যাদি সংস্থা ভেরিফিকেশন করে। এখানে দেখা হয় কোনো মামলা আছে কিনা, রাজনৈতিক পরিচয় নিজের এবং আত্মিয়স্বজনের, স্থায়ী ঠিকানা ঠিক আছে কি না, স্কুল, কলেজ ও মেডিকেল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় এ ও ভেরিফিকেশন করা হয়। ২. মামলা থাকলে ভেরিফিকশনে বাদ যাবে। ৩. বিরোধী রাজনৈতিক দলের কেউ হলে নিজে কিংবা ফ্যামিলি তাহলে বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা। এগুলো আগে থেকেই যেকোনোভাবে ম্যানেজ করতে হবে। ৪. কোটাধারীদের কোটা সংক্রান্ত কাগজপত্র খুব ভালভাবে যাচাই, বাচাই করা হয়। ৫. অনেকে মনে করেন ট্যাকনিকাল (স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ইঞ্জিনিয়ারিং) ক্যাডারের জন্য ভেরিফিকেশন সহজ। আসলে তা নয়। একই ব্যক্তিই এক এলাকায় সব ক্যাডারের ভেরিফিকেশন করেন, তাই সব ক্যাডারে সমানভাবেই সব যাচাই বাচাই করা হয়।
♦ গেজেট: সব রিপোর্ট ওকে থাকলে তারপর সরকারী গেজেটে নিজের নাম দেখা যাবে।
♦ জয়েনিং: ১. গেজেট দেওয়ার ১৫-৩০ দিনের মধ্যে নিজ মন্ত্রণালয়ে জয়েন করা লাগে। ২. মন্ত্রণালয়ে জয়েনিং এর পর কর্মস্থলে জয়েনিং এর জন্য আলাদা গেজেট প্রকাশিত হয়। এটা মন্ত্রণালয়ে জয়েনিং এর ৭ দিনের মধ্যে হয় সাধারণত।
এতগুলো প্রসিডিউর সফলভাবে শেষ করতে পারলে তবেই আপনি বিসিএস ক্যাডার। গুরুত্বপূর্ণ হল রিটেন পরীক্ষা, রিটেনে ভাল নাম্বার পেলেন তো আপনি ক্যাডার হওয়ার পথে অনেকদূর এগিয়ে গেলেন। এরপর যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল ভেরিফিকেশন। মামলা যদি থেকে থাকে যেকোনোভাবে মামলা তুলে নেওয়ার/সমাধান করার চেষ্টা করুন। রাজনৈতিক বিরোধ মিটমাট করুন। ভেরিফিকেশন শুরু হওয়ার আগে প্রতিবেশী /এলাকাবাসীকে /চেয়ারম্যান-মেম্বার এদের হাতে রাখুন। তো স্বপ্নের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য আজকে থেকেই শুরু করুন প্রস্তুতি।শুভকামনা সবার জন্য।
© ডা. আমিনুল ইসলাম সিলেট মেডিকেল কলেজ, ২০০৭-০৮ ৩৪ ও ৩৫ তম বিসিএস উত্তীর্ণ।
স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program
Wednesday, August 26, 2020
তিনটি শর্ত পূরণ করতে পারলেই আপনি বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেন!
বিসিএস ক্যাডার হতে চাইলে আপনাকে ৩ টি শর্ত পূরণ করতেই হবে। আমি এগুলোকে বিসিএস পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার 'রুলস অব থাম (Rules of thumb)' বলে থাকি।
প্রথম যে শর্তটি পূরণ করতে হবে সেটি হচ্ছে, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাটা জাগিয়ে রাখা। আমাদের কিশোর বয়সে একটা কথা প্রচলিত ছিল- 'সিনেমা দেখার টাকা ভুতে যোগাড় করে দেয়!' আসলেই সত্য কথা। তবে পূর্বশর্ত হচ্ছে, সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার তীব্র ইচ্ছাটা থাকা চাই।
বিসিএস প্রস্তুতি কৌশলের উপর লেখা আমার বই 'দ্য ক্যাডার : বিসিএস পরীক্ষা প্রস্তুতি কৌশল-শুরু থেকে শেষ’- এ আমি ব্রাজিলিয়ান লেখক 'পাওলো কোয়েলহো'র বিখ্যাত The Alchemist গ্রন্থ থেকে একটি কোটেশন ব্যবহার করেছি। কোটেশনটি এমন-
'তুমি যদি কোন কিছু পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা পোষণ করো, মহাবিশ্বের সবকিছুই ষড়যন্ত্র শুরু করে দেবে তোমাকে সেটি পাইয়ে দিতে'।
তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোন অর্জনের পথে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কোনোকিছু পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আপনাকে বাধ্য করবে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পেতে যা যা করা দরকার তা তা করতে। সেটা রুটিন মেনে পড়াশুনা করা হোক বা হিমালয়ের চূড়ায় উঠার কঠিন প্রশিক্ষণ নেওয়াই হোক।
বিসিএস ক্যাডার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলতে সর্বাগ্রে নিজের আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে। নিজের সামর্থ্যের লেভেলটা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে, ধারণা থাকতে হবে কোন ধরনের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে এবং কোন মাত্রার পড়াশুনা করলে বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায়।
আপনার হয়তো বিসিএস ক্যাডারদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড বা রেজাল্ট নিয়ে অহেতুক ভুল ধারণা আছে। প্রথমত, জেনে নিন- সবচেয়ে বেশী বিসিএস ক্যাডার হয় সাধারণত মধ্যম-মেধাবী পরীক্ষার্থীরা যাদের যেকোন পর্যায়ে একাডেমিক ফলাফল বা সিজিপিএ মধ্যম মানের বা সাধারণ মানের। স্নাতক পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণি পেয়ে অনেকেই বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। আমার এক ছোটভাই সাধারণ সরকারি কলেজ থেকে পাসকোর্সে ডিগ্রি পাশ করে তারপর প্রিলি-মাস্টার্স করে বর্তমানে বিসিএস ট্যাক্স ক্যাডারের মতো ভালো একটি ক্যাডারে চাকরি করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে শুধু আমারই ৬ জন ছাত্র খুব ভালো ভালো ক্যাডারে চাকরি পেয়েছে।
পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টমস ও কর ক্যাডারসহ বিভিন্ন ক্যাডারে আমার ছাত্র, সাবেক সহকর্মী, ও আত্নীয়স্বজন মিলে প্রায় শখানেক পরিচিত বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা আছেন যারা তাদের একাডেমিক পরীক্ষাগুলোতে খুব ভালো রেজাল্ট করেননি বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়/সাধারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন।
বিসিএস পরীক্ষার মোট ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১১০০নম্বরের পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় পরীক্ষক বা পিএসসি’র কেউ জানতে পারেন না কোন পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট কী বা কে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করেছে। ভাইভার ২০০ নম্বরের মধ্যে যদি আপনাকে অল্প নম্বর দিয়েও পাশ করানো হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে কমপক্ষে ৮০ নম্বর (পাশ-মার্কস) দিতে হবে। এখন বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির অসংখ্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয় বিধায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভাইভাতে বাদ পরার সম্ভাবনা কম এবং যেকোনো একটি বিসিএস ক্যাডার বা নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ৬০ থেকে ৮০%।
বিসিএস পরীক্ষা টেস্ট ক্রিকেটের মতো। পরীক্ষার কোনো একটি বা দু’টি বিষয়ে খারাপ করলে অন্যান্য বিষয়ে ভালো করে সফল হওয়ার সুযোগ আছে। শুধু এটার পেছনে লেগে থাকতে হবে এবং বুদ্ধিদীপ্ত পরিশ্রম করতে হবে। আমি বলে থাকি, ‘Don’t work hard, work smart and hard’. এটা সত্য যে, কোনো কিছু পাওয়ার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা থাকলে আপনার সেটা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। যেকোন অবস্থায়ই নিজেকে Motivated রাখুন। সফলতা আসবে।
দ্বিতীয় শর্তটি হচ্ছে, আপনাকে পরিকল্পিত পরিশ্রম করতে হবে। চাকরি পেতে পরিশ্রম অনেকেই করে, কিন্তু উপযুক্ত পরিশ্রম ক’জন করে? অনেকেই একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করেই নিজেকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার যোগ্য মনে করে।
চাকরির পড়াশুনার সাথে একাডেমিক পড়াশুনার অনেক পার্থক্য আছে। তাই অনার্স পড়াকালীন একাডেমিক পড়াশুনার ফাঁকেফাঁকে চাকরিপ্রাপ্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করে চাকরির জন্য পড়াশুনা শুরু করলে চাকরি পেতে পেতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স প্রায় শেষ হয়ে আসবে। আপনি যদি একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করার দু’বছরের মধ্যে চাকরি না পান তবে আপনার মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্বিক শূন্যতা কাজ করবে, এক ধরনের বেদনাবোধ ও অস্থিরতা আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াবে।
এই সংকট কাটাতে অনার্স শেষবর্ষ পরীক্ষা দিয়েই চাকরির পরীক্ষার জন্য কঠিন প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে। ঠিক করতে হবে আপনার বিসিএস পরীক্ষা প্রস্তুতির অব্যর্থ কৌশল। আমি যখন আমার সিলেট ক্যান্টনমেন্টের আবাসিক কোয়ার্টারের আশেপাশে জগিং করতে যেতাম তখন সেনাদের প্রশিক্ষণ এলাকায় অবস্থিত একটা পাহাড়ের চূড়ায় খুব বড় করে লেখা একটা মেটাল-সাইন দেখতে পেতাম। তাতে লেখা ছিল, ‘কঠিন প্রশিক্ষণ, সহজ যুদ্ধ’।
আসলেই সত্য কথা। কঠিনভাবে প্রস্তুতি নিলে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা সহজ হয়ে যায়। যেকোন প্রতিযোগিতার জন্যই কথাটা প্রযোজ্য।
উক্ত পাহাড়টির পাদদেশের শুটিং রেঞ্জে লেখা ছিল, ‘Shoot to kill’ অর্থাৎ ‘হত্যা করতেই গুলি করো’। আপনাকেও বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্যই সিরিয়াসলি বিসিএস পরীক্ষা দিতে হবে। ৬০ ভাগ বিসিএস পরীক্ষার্থী অযথাই ক্যাজুয়্যালী বিসিএস পরীক্ষা দেয়। অনেকে শুধু ভাগ্য বা দৈব’র উপর ভর করেই আধো-প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দিতে যায়। এটা শুধু সময়ের অপচয় মাত্র। অন্তত নিজের সক্ষমতার সবটুকু দিয়ে কঠোর প্রস্তুতি নিয়েই বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া উচিৎ। এভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে এই বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারবেন যে, আপনি সামর্থ্য অনুযায়ী অন্তত চেষ্টাটা করেছেন।
আমার অনেক বন্ধুই ভালো ক্যাডারে চাকরি পাওয়ার সকল সামর্থ্য থাকলেও আত্ববিশ্বাসহীনতা আর দায়সারা প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কারণে ক্যাডার সার্ভিসে চাকরি পাননি। অথচ অসংখ্য সাধারণ মেধার শিক্ষার্থীকে দেখেছি শুধু পরিশ্রম আর লেগে থাকার কারণে বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেছে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বিসিএস পরীক্ষার জন্য যারা খুব পরিশ্রম করে তারা বিসিএস ক্যাডার হতে না পারলেও অন্য যেকোন প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি পেয়ে যায়। বিশ্বাস করুন, যারা বিসিএস কর্মকর্তা হয়েছেন তাদের অন্তত ৪০ ভাগ খুব সাধারণ মানের ছাত্র আর অসাধারণ পরিশ্রমী ছিলেন।
তৃতীয় শর্তটি হচ্ছে, আপনাকে প্রস্তুতি-কৌশল ঠিক করতে Feasibility Study-তে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে।
আমি আমার লেখা ‘দ্য ক্যাডার’ বইয়ের ভূমিকার শুরুতেই লিখেছি, ‘প্রতিযোগিতায় টিকে থাকে তারাই যারা কৌশলী ও পরিশ্রমী’। আপনি যত শক্তিশালী বা মেধাবীই হোন না কেন, কৌশল ঠিক না করে কোনো যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরলে সে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯%, সেটা যত তুচ্ছ যুদ্ধই হোকনা কেন। আপনাকে অবশ্যই বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, সিলেবাস ও আপনার সক্ষমতা স্টাডি করতে হবে। সঠিকভাবে সঠিক বইটি পড়তে হবে। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অনেক পরীক্ষার্থীরই সিস্টেম-লসের কারণে প্রচুর সময়ের অপচয় হয় যা অপূরণীয়। আপনি যদি ভাবেন, পরীক্ষা দিতে দিতেই প্রস্তুতির কৌশলটা রপ্ত করে ফেলবেন, তা হলে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি পেতে পেতে আপনার জীবন-নদীতে অনেক জল গড়িয়ে যাবে এবং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০ বছর পর্যন্ত করার আন্দোলনে আপনিও শামিল হবেন!
আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়ার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর কৌশল কোনটি? আমি উত্তর দিব, অন্তত চার-পাঁচজন বিসিএস কর্মকর্তার লিখিত পরামর্শ গ্রহণ করা। হ্যাঁ, আপনাকে বিসিএস প্রিলিমিনারি, লিখিত, ভাইভা, পুলিশ ভেরিফিকেশন, স্বাস্থ্যপরীক্ষা, ফরম পূরণ ও ক্যাডার চয়েজের কৌশলের উপর বিভিন্ন ক্যাডারের বিভিন্ন একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের চার-পাঁচজন কর্মকর্তার লিখিত পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
নিম্নলিখিত যেকোনো একটি উৎস থেকে নিতে পারেন এই পরামর্শ:
ক. বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের লেখা পরামর্শগুলো পড়তে পারেন। অনেক কর্মকর্তাই মাঝেমধ্যে বিভিন্ন টপিকের উপর লিখে থাকেন। এতে একটা ধারণা পাবেন। তবে এগুলো বিচ্ছিন্নভাবে লেখা পোস্ট। একসাথে সবগুলো ধাপের এবং সব বিষয়ের প্রস্তুতি কৌশলের উপর গোছানো কোনো লেখা গ্রুপগুলোতে বা অনলাইনে নেই। এটা সম্ভবও নয়।
অথবা (বিকল্প উৎস)-খ. আমার লেখা ‘দ্য ক্যাডার: বিসিএস পরীক্ষা প্রস্তুতি কৌশল-শুরু থেকে শেষ’ বইটি পড়তে পারেন। আমি বিভিন্ন ক্যাডারের অন্তত ২০জন কর্মকর্তাকে ইন্টারভিউ করে এবং আরও প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তা কর্তৃক অনলাইনে ও পত্রিকায় লেখা বিসিএস প্রস্তুতির উপর পরামর্শ এনালাইসিস করে এবং নিজে দু’বার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে নবীন বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য ‘দ্য ক্যাডার’ বইটি লিখেছি। নবীন(Beginners) বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য বিসিএস পরীক্ষার ফরম পূরণ, সঠিকভাবে ক্যাডার চয়েজ, প্রিলিমিনারি, লিখিত, ভাইভা, স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও পুলিশ-ভেরিফিকেশন এর প্রাক-প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে ‘দ্য ক্যাডার’ বইয়ে বিস্তারিত লিখেছি।
বিসিএস পরীক্ষার সবগুলো ধাপের সব বিষয়ের প্রস্তুতি কৌশলের উপর লিখিত এটি বাংলাদেশে প্রথম-প্রকাশিত বই। প্রতিটি লেখাই বিভিন্ন ক্যাডার সদস্যদের পরামর্শ এনালাইসিস করে ও আমার নিজের বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা। গত ৯ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে প্রাকাশিত হওয়ার পর থেকে বইটি ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত একটানা বাংলাদেশে বই বিক্রির ১ নম্বর ই-কমার্স সাইট Rokomari.com-এ টপ-সেলার তালিকায় আছে।
শেষকথা: বিসিএস ‘নন-ক্যাডার নিয়োগ (বিশেষ)বিধিমালা-২০১০ ও সংশোধিত বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগ(বিশেষ) বিধিমালা-২০১৪ পাশ হওয়ায় সরকারি প্রথম ও ২য় শ্রেণির অনেক পদেই এখন বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১০ সালের আগে নন-ক্যাডারে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হতো না। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে বেতন দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় বিসিএস ক্যাডার, নন-ক্যাডার(প্রথম শ্রেণি) ও নন-ক্যাডার ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিগুলো খুবই আকর্ষণীয় চাকরি হয়ে গেছে।
তাই সময় নিয়ে প্রস্তুতির সলিড একটা পরিকল্পনা করে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিন।
সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য কখন শুরু করবেন প্রস্তুতি?
উত্তর হচ্ছে-‘Now or never’ অর্থাৎ এখনই শুরু না করলে আর কখনোই হয়তো প্রস্তুতি শুরু করার উপযুক্ত সময় পাবেন না।
যত আগে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবেন, অনার্স পাশ করার পর তত তাড়াতাড়ি সরকারি চাকরিটা পেয়ে যাবেন।
আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program
কোচিং না করেও বিসিএস এ ভালো করার সহজ কৌশল : সুশান্ত পাল
(Those who think, can not do anything, do not start preparing for BCS exams, do not worry about it, and coaching is thinking about everyone, for them)
There is no habit of reading my paperstepper. Before starting the preparation for the BCS exam, I could not read any part of the paper except the entertainment page and the literature page. Paper placed at home 2
(যাঁরা ভাবেন, কিছুই পারেন না, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করবেন কী করবেন না, এটা নিয়ে দ্বিধায় আছেন এবং কোচিংকেই সবকিছু ভেবেটেবে বসে আছেন, তাঁদের জন্য)
আমার পেপারটেপার পড়ার অভ্যেস নেই। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করার আগে বিনোদন পাতা আর সাহিত্য পাতা ছাড়া পেপারের আর কোনো অংশ তেমন একটা পড়তাম না। বাসায় পেপার রাখত ২টা। এর একটাও আমি পড়তাম না। বিসিএস’য়ের প্রস্তুতির জন্য নিতান্ত বাধ্য হয়ে অনলাইনে প্রতিদিন ৫-৬টা পেপার পড়তে শুরু করি এবং চাকরিটা পেয়ে যাওয়ার পর আবারও পেপারপড়া ছেড়ে দিই।
দেশের এবং বিশ্বের কোথায় কী হচ্ছে, রাজনীতির হাওয়া কোনদিকে, ব্যবসাবাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি, এসব ব্যাপার নিয়ে আমার কোনকালেই কোন মাথাব্যথা ছিল না, আমি এর কিছুই জানতাম না, বুঝতাম না, এবং এ নিয়ে আমার কোন দুঃখবোধও ছিল না। আমার নীতি হল, আমার যা দরকার নেই কিংবা ভাল লাগে না, তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। সবকিছু জানতেই হবে কেন? পৃথিবীর সবকিছু জেনেটেনে ‘সুখে আছে যারা, সুখে থাক তারা।’
বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। দেখলাম, প্রিলি আর রিটেনের জন্য হাতে সময় আছে মাত্র ৪-৫ মাস। (সময় পেয়েছিলাম এরও কম।) প্রস্তুতি শুরু করার পর আমার প্রথম অনুভূতিঃ সবাই সবকিছু পারে, আমি কিছুই পারি না। অনেকেই দেখলাম বিসিএস নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স-পিএইচডি শেষ করে এখন পোস্টডক্টরেটে আছে। কোচিংয়ে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর ক্লাসে এক স্যার আমাকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম কী?
(পরে জেনেছি, কথাটা হবে, বিদেশমন্ত্রী) যে ছেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম জানে বলে খুশিতে বাকবাকুম করতে করতে একধরণের আত্মশ্লাঘাবোধ করে, তার পক্ষে এটা জানার কথা না এবং এ না-জানা নিয়ে তার মধ্যে কোন অপরাধবোধ কাজ করার প্রশ্নই আসে না! পারলাম না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি হাহাহিহি শুরু হয়ে গেছে। তখন বুঝলাম, ‘এটা একটা সহজ প্রশ্ন ছিল।’ স্যার বললেন, “দেখি, এটা কেউ বলতে পারবেন?” সবাই হাত তুলল, উত্তরও দিল। সবাই-ই পারে! বুঝলাম, এই মুহূর্তে আমার চেহারাটা একটু লজ্জা-পাওয়া লজ্জা-পাওয়া টাইপ করে ফেলা উচিত।
আমার বেহায়া চেহারাটাকে লাজুক লাজুকটাইপ করার চেষ্টা করছি, এমনসময় স্যার বললেন, “আপনার সম্পর্কে তো অনেক প্রশংসা শুনেছি। আপনি নাকি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, ভাল স্টুডেন্ট। এটা পারেন না কেন? আপনার এজ কত?” ভাবলাম, কাহিনী কী? উনি কি আমার ঘটকালি করবেন নাকি? কিন্তু আমার মত বেকার ছেলেকে কে মেয়ে দেবে?
(আমি আসলে বেকার ছিলাম না, নিজের কোচিং সেন্টার ছিল অন্যান্য ব্যবসাও ছিল; প্রচুর টাকাপয়সা ইনকাম করতাম। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষিত ছেলেরা চাকরি না করলে সবাই ভাবে, বেকার।) এসব ভাবতে ভাবতে আমার এজটা বললাম। রিপ্লাই শুনলাম, “ও আচ্ছা! আপনার তো এখনো এজ আছে। অন্তত ৩-৪ বার বিসিএস দিতে পারবেন।
চেষ্টা করে যান। প্রথমবারে হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নাই, ২-৩ বার চেষ্টা করলে হলেও হতে পারে। আপনার বেসিক দুর্বল।” স্যারকে কিছুই বললাম না। কিন্তু মেজাজ খুব খারাপ হল। উনার প্রতি সমস্ত আস্থা আর সম্মানবোধ চলে গিয়েছিল। উনাকে আমার মনে হয়েছিল একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ। যে মানুষ আমাকে না চিনেই প্রথম দেখায় এমন কনফিডেন্টলি ফাউল একটা অ্যাসেসমেন্ট করতে পারে, তার ক্লাস করার তো প্রশ্নই আসে না, সে উনি যত ভাল ক্লাসই নিন না কেন!
আমি কিছু পারি না, এটা তো আমি জানিই! এজন্যই তো কোচিংয়ে আসা। পারলে কি আসতাম নাকি? আমি একটা গাধা, এটা শোনার জন্য এত কষ্ট করে, সময় নষ্ট করে, গাড়ি ভাড়া দিয়ে বাসা থেকে কোচিংয়ে এসেছি নাকি? এটা শুনতে তো আর এতদূর আসতে হয় না। বাসায় বসে থাকলে মা দিনে অন্তত ১০বার একথা বলে! তখনই ঠিক করে ফেললাম, ব্যাটার ক্লাস আর কোনদিনও করব না। করিওনি।
পরে জানলাম, উনি অংক-ইংরেজি-বাংলা-বিজ্ঞানে অতিদুর্বল সাধারণ জ্ঞানে মহাপণ্ডিত ৫বার বিসিএস’য়ে ব্যর্থ একজন বিশিষ্ট বিসিএস বিশেষজ্ঞ। শুধু নিজেরটা ছাড়া পৃথিবীর সকল মানুষের ব্যর্থতার কারণগুলি তিনি খুঁজে দিতে পারেন। উনি জানতেন, সুশান্ত সাধারণ জ্ঞানের কিছুই পারে না। কিন্তু উনি এটা জানতেন না, সুশান্ত বাংলা-ইংরেজি-অংক-বিজ্ঞান ওসব বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স করা যেকোনো স্টুডেন্টের চাইতে ভাল না পারলেও কোন অংশেই কম পারে না।
উনি এটাও জানতেন না, শুধু সাধারণ জ্ঞানে তোতাপাখি হয়ে বিভিন্ন খাঁচায় বসে বসে মনভোলানো নানাঢঙে ডাক দেয়া যায়, কিছু হাততালিও জুটে যায়, কিন্তু বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায় না। ক্লিনটনের ওয়াইফের বান্ধবীর পোষা কুকুরের নামও আপনার মুখস্থ, কিন্তু আমার নানার একটা কালো কুকুর ছিল’কে ইংলিশে লিখেন, My grandfather was a black dog……… কোনো কাজ হবে না। সত্যি বলছি, কোনো কাজই হবে না।
কোচিংয়ে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর প্রথম মডেল টেস্টে পেলাম ১০০’র মধ্যে ১৭! বলাই বাহুল্য, আমার মার্কসটাই ছিল সর্বনিম্ন। সেকেন্ড লোয়েস্ট মার্কসটা ছিল ৩৮; আমার প্রাপ্ত
বলাই বাহুল্য, আমার মার্কসটাই ছিল সর্বনিম্ন। সেকেন্ড লোয়েস্ট মার্কসটা ছিল ৩৮; আমার প্রাপ্ত মার্কসের দ্বিগুণের চেয়েও ৪ বেশি! বুঝুন আমার অবস্থাটা! বাকিরা আমার অনেকআগে শুরু করেছে, আমি তো বিসিএস কথা জীবনেও শুনি নাই, আমি তো মাত্র শুরু করলাম—-নিজেকে খুশি করার জন্য এসব কথা ভাবতেই পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি।
ভাবলাম, ঠিক আছে, আমি না হয় কিছু পারি না, সেটা তো আর আমার দোষ না। কিন্তু আমি যদি সে দুর্বলতাকে জয় করার জন্য কিছু না করি, হাতপা গুটিয়ে বসে থাকি, সেটা তো নিশ্চয়ই আমার দোষ! প্রচণ্ড পরিশ্রম করে পড়াশোনা করতে শুরু করলাম একেবারে জিরো থেকে। কে কী পারে সেটা ভেবে মন খারাপ না করে দুটো ব্যাপার মাথায় রেখে কাজ করতে লাগলাম। এক। সবাই যা পারে, সেটা পারাটা আদৌ কতটুকু দরকার। অন্ধের মত না পড়ে একটু বুঝেশুনে পড়তে শুরু করলাম।
সবাই যা যা পড়ে, আমাকেও তা-ই তা-ই পড়তে হবে, এটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম। দুই। সাধারণ জ্ঞানে ভাল কারোর সাথে নিজেকে তুলনা না করে নিজের সাথেই নিজেকে তুলনা করা শুরু করলাম। গতকালকের সুশান্তের চাইতে আজকের সুশান্ত কতটা বেশি কিংবা কম পারে, শুধু সেটা নিয়েই ভাবতাম। আমার কম্পিটিশন হতো আমার নিজের সাথেই।
অন্যকাউকে না, ‘আজকের আমি’ ‘আগেরদিনের আমি’কে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। কাজটা প্রতিদিনই করতাম। যারা ভাল পারে, তারা তো আর রাতারাতি এত ভাল পারে না। অনেক পরিশ্রম আর সাধনার পর এ দক্ষতা অর্জন করা যায়। যে স্টুডেন্টা অংকে ২০ পায়, সে যদি কখনো অংকে ২৪ পেয়ে যায়, তবে সে কিন্তু সাকসেসফুল।
জানি, ৩৩ পেলে পাস, সে ফেল করেছে; তবুও আমি বলব, সে কিন্তু সফল। সে তো নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে। এভাবে করে একদিন সে ১০০’তে ১০০-ই পাবে! এরজন্য ওকে বুঝেশুনে প্রচুর প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে এবং এটাকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। মজার ব্যাপার হল, জেতাটা একটা অভ্যাস। যে একটা চাকরি পেয়ে যায়, সে চাকরি পেতেই থাকে।
এই ফাঁকে জানিয়ে রাখি, হারাটাও কিন্তু একটা অভ্যাস। ভাল কথা, যারা কোচিং করছেন, কোচিংয়ে মার্কস কমটম পেলে মন খারাপ করবেন না। অনেকেই মেয়েদের কাছে হিরো হওয়ার জন্য আগে থেকে প্রশ্ন যোগাড় করে ‘পরীক্ষা’ দেয়। কোচিংয়ের প্রশ্ন যোগাড় করা তো কোন ব্যাপার না। এইরকম অনেক বান্দাকে আমি সেইরকমভাবে ধরা খেতে দেখেছি।
যে ছেলে কোনদিনও ঠিকভাবে বিসিএস’য়ের নামও শোনেনি, যে ছেলে জীবনেও কোন চাকরির পরীক্ষাই দেয়নি, সে ছেলে যদি বিসিএস পরীক্ষায় প্রথমবারেই ফার্স্ট হতে পারে, তবে আপনি কেন পারবেন না? ফার্স্ট হওয়াটা ভাগ্যে জুটুক আর না-ই বা জুটুক, মনপ্রাণ বাজি রেখে চেষ্টা করলে অন্তত চাকরিটা তো জুটবেই। ভাবছেন, খুব হেসেখেলে ফার্স্ট হয়ে গেছি? কিছুতেই না! এর জন্য অনেকরাত না ঘুমিয়ে কাটাতে হয়েছে। অনেক ছোট ছোট সুখকে গুডবাই বলে দিতে হয়েছে। মুখ বন্ধ রেখে মানুষের বড় বড় কথা হজম করে পড়াশোনা করতে হয়েছে।
আমি বিশ্বাস করি, আপনারাও পারবেন। যারা চাকরি পায়, ওরা আপনাদের চাইতে কোনোভাবেই বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন নয়। নিজের উপর আস্থা রাখুন, নিজেকে সম্মান করুন, আপনার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করুন। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে!
শুভকামনায়
সুশান্ত পাল
আপনাদের সিনিয়র সহকর্মী
The boy who has never heard the name of the BCS, if the boy who did not test any job in his life, then that boy may be in the BCS exam for the first time, but why can not you? First of all, if you try to put a joke in front of yourself and do not get involved, then try to do the least work. Thinking, I got very quick before? Nothing! There is a lot of time to sleep in it.
স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program
Tuesday, August 25, 2020
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে ২৫ পরামর্শ
১) ব্যাকরণ অংশে ১৫টি প্রশ্ন এবং সাহিত্য অংশে ২০টি প্রশ্নসহ মোট ৩৫ নম্বর বাংলার জন্য বরাদ্দ। এখানে একটা কথা বলা জরুরি, ১৫-এর জায়গায় ১৬ এবং ২০-এর জায়গায় ১৯ও হতে পারে। তবে ৩৫ ঠিকই থাকবে। আর একটা কথা মনে রাখবেন, পিএসসি প্রদত্ত সিলেবাস অনুযায়ী অনেক সময় সব প্রশ্ন না-ও হতে পারে। যেমন কারক সিলেবাসে নেই, কিন্তু প্রশ্ন আসতে পারে। এলে তো আর বলতে পারবেন না, এর উত্তর দেব কেন? পারব না। সুতরাং প্রস্তুতি যেহেতু নেবেন, ভালো করেই নেবেন।
২) বাংলা ব্যাকরণ কিছুটা কঠিন ধাঁচের। সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসরণে রচিত। এর মধ্যে আপনি কিছু নিয়ম বুঝবেন, সহজে মনেও রাখতে পারবেন। আবার কিছু নিয়ম আপনি বুঝবেন না। যা বুঝবেন না, যে পর্যন্ত পারেন মুখস্থ করে ফেলবেন। সব সময় বোঝা যাবে না এটাই স্বাভাবিক। মুখস্থ বিদ্যাও একটা বিরাট সম্পদ।
৩) ব্যাকরণের জন্য আপনি যে বইটা খুব ভালো করে পড়বেন, তা হলো নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইটা। বিশেষ করে নানা নিয়মের উদাহরণগুলো ভালো করে দেখবেন! সঙ্গে একটা এমসিকিউ বাংলা গাইডও রাখতে পারেন। বিগত বছরে আসা প্রশ্ন দেখতে সাহায্য করবে এটি!
৪) কয়েকটা বিষয় খুব ভালো করে পড়বেন। যথা সন্ধি, উপসর্গ, সমাস, নত্ব-বিধান ও ষত্ব- বিধান, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, প্রত্যয়, ধ্বনি পরিবর্তন ইত্যাদি।
৫) ব্যাকরণ নিয়ে বিখ্যাত যেসব গ্রন্থ রচিত হয়েছে, তা অবশ্যই পড়ে যাবেন!
৬) শুদ্ধীকরণ অংশে শব্দের বিশেষ অর্থে প্রয়োগ, বানান ও বাক্য শুদ্ধি, লিঙ্গের অপপ্রয়োগ, সন্ধি ও সমাসের অপপ্রয়োগ খুব ভালো করে পড়বেন! কঠিন বানানসমূহ বারবার লিখবেন। এতে সহজে মনে থাকবে!
৭) পরিভাষা থেকে প্রতিবছর প্রশ্ন আসে। তাই এতে জোর দিতে হবে! যেগুলো একটু বিদঘুটে তা ভালো করে পড়ুন!
৮) নিপাতনে সিদ্ধ স্বরসন্ধি, নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জনসন্ধি, বিশেষ নিয়মে সাধিত ব্যঞ্জনসন্ধি, নিপাতনে সিদ্ধ বিসর্গ সন্ধি একটু দেখে যাবেন! মোটকথা, যত বিশেষ নিয়ম আছে সবই গুরুত্বপূর্ণ!
৯) ব্যাকরণের কোনো অধ্যায় যদি কারও খুব বেশি কঠিন লাগে, তবে এড়িয়ে যান!
১০) যুক্তবর্ণ যেগুলো একটু প্যাঁচানো তা পড়বেন। এ রকম ২০টির মতো আছে!
১১) বিদেশি শব্দের মধ্যে আরবি, ফারসি, পর্তুগিজ, তুর্কি, ফরাসি ও মিশ্র শব্দসমূহ মনোযোগ দিয়ে পড়বেন! আশা করি কমন পেয়ে যাবেন।
১২) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ও বিবর্তন এবং এর যুগ বিভাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ!
১৩) প্রাচীন যুগে চর্যাপদ বৃত্তান্ত, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ও সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অবদানগুলো পড়তে হবে!
১৪) মধ্যযুগে মঙ্গলকাব্য, মুসলিম সাহিত্য ও অনুবাদ সাহিত্য জোর দিয়ে পড়তে হবে! এর সঙ্গে যুগসন্ধিক্ষণ ও ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে!
১৫) আধুনিক যুগের জন্য ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, উইলিয়াম কেরিসহ অন্যদের কমপক্ষে গ্রন্থগুলোর নাম জানতে হবে!
১৬) আধুনিক যুগে সাহিত্যিকদের পর্যায় বা ক্রম অনুযায়ী পড়ার দরকার নেই। গুরুত্ব অনুযায়ী পড়বেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক হলেন ঈশ্বরচন্দ্র, রাজা রামমোহন, বঙ্কিমচন্দ্র, মাইকেল মধুসূদন, মীর মশাররফ, রবিঠাকুর, কাজী নজরুল, জসীমউদ্দীন, রোকেয়া, ফর্রুখ আহমদ, কায়কোবাদ, শরৎচন্দ্র, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আহসান হাবীব, জীবনানন্দ দাশ, জহির রায়হান, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারীলাল চক্রবর্তী, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, মুনীর চৌধুরী, শওকত ওসমান, শামসুর রাহমান, সুফিয়া কামাল, সমর সেন, সৈয়দ শামসুল হক! এই ২৫ জনকে আগে ভালো করে জানুন!
১৭) ড. সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা বইটি পড়তে পারেন। বিগত প্রশ্নের আলোকে কিছু সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রশ্নও পড়বেন।
১৮) প্রগতিশীল লেখকেরা একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আহমদ ছফা, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ, বদরুদ্দিন ওমর, আবদুল্লাহ আল মামুন, জাহানারা ইমাম, শাহরিয়ার কবির, আরজ আলী মাতুব্বর, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা ইত্যাদি।
১৯) যেসব গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও উপন্যাস কখনো পাঠ্যবইয়ে ছিল বা আছে তা ভালো করে দেখবেন! এর চরিত্র, কাহিনি ও কঠিন শব্দের অর্থগুলো আয়ত্ব করে নেবেন!
২০) সাহিত্যবিষয়ক সংগঠন যেমন বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, মুসলিম সাহিত্য সমাজ, হিন্দু কলেজ ও ইয়ংবেঙ্গল, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি, সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম, উপাধি, বিখ্যাত ভ্রমণকাহিনি পড়বেন!
২১) সাহিত্য অঙ্গনে কিছু উক্তি আছে, যা বেশ নাম করেছে। এসব কোনটা কার একটু আয়ত্ত করে নেবেন!
২২) কিছু পত্র-পত্রিকা সম্পর্কেও জানতে হবে! গুরুত্বপূর্ণ কিছু পত্রিকা হলো বেঙ্গল গেজেট, দিকদর্শন, সমাচার দর্পণ, সমাচার সভারাজেন্দ্র, সবুজপত্র, মোসলেম ভারত, কল্লোল, সমকাল, বেগম, নবযুগ, হিতকরী, সওগাত ইত্যাদি! সম্পাদক, প্রকাশক ও প্রকাশকাল জেনে নেবেন!
২৩) মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনভিত্তিক গল্প, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও নাটক পড়তে হবে কিছু। এর চরিত্রগুলোও গুরুত্বপূর্ণ।
২৪) বাংলা সাহিত্যে যা কিছু প্রথম, তার তালিকাটা মনে রাখতে হবে। যেমন প্রথম উপন্যাস কোনটি?
২৫) সাম্প্রতিক কালে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ লেখকের লেখা প্রকাশিত হয়, তার নাম জানার চেষ্টা করবেন। আধুনিক যুগ বলতে আজকের দিন পর্যন্ত সময়কে বোঝায়। তাই চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। খ্যাতিমান রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লেখাও জেনে যাবেন। যে গ্রন্থগুলো সম্প্রতি কোনো পুরস্কার পেল বা পাবে তা গুরুত্বপূর্ণ। পারলে ওই লেখক সম্পর্কেও জানবেন। আর তাতেই আসবে সফলতা!
© লেখক: শাহ মো. সজীব, প্রশাসন ক্যাডার (দ্বিতীয় স্থান), ৩৪তম বিসিএস।
স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program