Sunday, September 20, 2020

যেভাবে পড়লে এক মাসেই ৪১তম বিসিএসে চান্স সম্ভব!


এই লিখাটি মূলত বিসিএস প্রিলিমিনারি নিয়ে প্রিপারেশন খুব ভাল নয় কিংবা চাকরি বা অন্য পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএস দেবেন বলে ঠিক করেছেন তাদের জন্য।

হাতে যদি ৩০-৪৫ দিন সময় থাকে তবে আত্মবিশ্বাসী হোন, প্রিলিতে উতরে যাওয়ার জন্য এটা পর্যাপ্ত সময়।

আমি ৩৩, ৩৪, ৩৫ তম প্রিলি তিনটিতেই অংশ নিয়েছিলাম এবং উত্তীর্ণ হই সবগুলোতেই আল্লাহর রহমতে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি।
এই সময়টাতে আপনি যে রিডিং ম্যাটেরিয়ালসগুলো কালেক্ট করবেন:
বিগত বছরের প্রশ্ন সম্ভার (নীলক্ষেতে গেলেই পাবেন, সেগুলো সলভসহ পাবেন, ৩০-৫০ টাকা নিবে দাম)

এসিউরেন্স/ ওরাকল/ MP3 এদের যেকোনোটার শর্ট একটা ডাইজেস্ট ৮০-১২০ টাকা নেবে, ১৫০-২০০ পৃষ্ঠার ছোট একটা বই, এখানে মূলত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিএসসির পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়নের উপর ভিত্তি করে সবগুলো বিষয় নিয়েই প্রশ্নোত্তর থাকে। বড় ডাইজেস্টগুলোর মতো কিংবা সাবজেক্ট ওয়াইজ আলাদা বইগুলোর মতো অতো ডিটেইলস না। যারা অলরেডি সাবজেক্ট ওয়াইজ আলাদা বই কিনে পড়েছেন তাদের এটা না কিনলেও চলবে।

প্রফেসর'স প্রকাশনী প্রিলির আগ দিয়ে একটা বই বের করে, স্পেশালি বিসিএস ক্যান্ডিডেটদের জন্য, এইটা খুব খুব খুব উপকারি। আমি ৩৫ তম প্রিলিতে কেবলমাত্র এটা পড়ে প্রিলির প্রিপারেশন নিয়েছিলাম।

কারণ একই সময়ে ৩৪ তম'র ভাইভা চলছিল, ভাইভার প্রিপারেশন নিতে গিয়ে আলাদা করে ৩৫ এর প্রিলির জন্য পড়তে পারি নি । তবে কেউ এটা পড়েই প্রিলিতে টিকে যাবেন সেই আশা করবেন না ।

আমার ক্ষেত্রে ভাগ্য এবং আগের দুই প্রিলির হালকা পাতলা প্রিপারেশন এর কারণে আমি কেবল এটার ভরসা করে গিয়েও উতরে যেতে পেরেছিলাম। দাম নেবে ৫০ টাকা, তবে এটার চাহিদা প্রচুর থাকে বিধায়, ক্রাইসিস ক্রিয়েট হলে অনেক বেশি দামেও কেনা লাগতে পারে।

যে মাসে পরীক্ষা হবে সেই মাসসহ তার আগের ৩-৪ মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স/ কারেন্ট ওয়ার্ল্ড।
আমি ৩৫তম দিতে গিয়ে সবচেয়ে খারাপ করেছি ইংরেজি লিটারেচারে। এর থেকে আমার মনে হয়েছে এর জন্য আলাদা করে একটু প্রিপারেশন নেয়াটা উচিত। নীলক্ষেতে বিসিএস/ ব্যাংক কিংবা আরও এই জাতীয় পরীক্ষাগুলোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়/ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারদের ইংরেজি সাহিত্যের উপর সামারি টাইপ ছোট ছোট বুকলেট টাইপ বই পাওয়া যায়; ৩০-৫০ টাকা নেবে। এগুলোতে ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন কাল, কে কোন কালের সাহিত্যিক, কার লিখা কী ধর্মী, বিখ্যাত বই কে কি লিখে গেছেন এসব পাওয়া যাবে।
আর ইংরেজি শব্দার্থ, বিপরীতার্থক এসব নিয়ে যাদের দুর্বলতা তারা সাইফুর'স/মেন্টর'স কিংবা বিসিএস+ব্যাংক প্রিপারেশনের জন্যেই কমন কিছু শব্দের বই পাওয়া যায়, সংগ্রহে রাখতে পারেন। ঘাবড়াবেন না, বিসিএসে আপনাকে GRE স্ট্যান্ডার্ড Vocabulary দিতে যাবে না।

কীভাবে পড়া উচিত?
আমি শুরুতেই বলেছি লিখাটা হচ্ছে যাদের হাতে সময় কম, প্রিপারেশন এতোদিনে খুব ভাল নিতে পারেন নি তাদের জন্য।
আমি শুরুতেই পরামর্শ দিবো, আগে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখুন, সেগুলো না পারলে/ না জানা থাকলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমি সাজেস্ট করবো, প্রথমে যে বইটির কথা বলেছি সেটার বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ, গণিত, দুই ভাষার সাহিত্য এগুলো অবশ্যই পড়ে শিখে ফেলুন।

যেগুলো কঠিন মনে হচ্ছে সেগুলো আপাতত অন্যকোনো কালির কলম বা মার্কার দিয়ে মার্ক করে রাখুন। আন্তর্জাতিক কিংবা বাংলাদেশের জেলা/ থানা'র সংখ্যা টাইপ খুব পুরাতন প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারেন, মানে যেগুলো আপনি জানেন ২৮ তম বিসিএস এর সময় যেই সংখ্যা ছিল, এখন পরিবর্তন হয়েছে সেগুলো আর কি।

আপনি যদি মিনিমাম ১০-১২ টি বিগত বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন সলভ করে ফেলেন, তাহলে দেখবেন আপনার মধ্যে প্রিলির বিষয়ে খুব ভালো ধারণা চলে এসেছে যে কী ধরণের প্রশ্ন হতে পারে। এখন আপনার একটু ডিটেইলস পড়ার সময় । যদি না আপনি বাংলা সাহিত্য/ ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র/ছাত্রী হয়ে থাকেন, তবে আপনার জন্য বাংলা-ইংরেজি সাহিত্য জিনিসটা একটু কঠিন হবেই ।

অনেকের কাছে এগুলোর চেয়ে আন্তর্জাতিক বা বাংলাদেশ বিষয়াবলি কঠিন লাগে । আপনি যেহেতু বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখেছেনই, আপনি নিজেকে বিচার করুন, কোনটিতে আপনার দুর্বলতা বেশি, সেটির উপরে জোর দিন।

♦ আমার একটি কমন অবজারভেশন: যারা ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা তারা সাধারণত সাহিত্যিক/কাল/বইপত্র এসবের নামে দুর্বল হয় । মেডিকেলে ৫ বছর পড়ে মানুষজন গণিত এর সাধারণ নিয়মগুলো ভুলে যান, সাথে বাংলা ব্যাকরণ তো আছেই। আর্টস কিংবা কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে যারা প্রথম বারের জন্য এটেম্পট নিচ্ছেন অনেকের গণিত আর ইংরেজিভীতি থাকে।

তবে সবার কমন এক জায়গাতে কমবেশি প্রবলেম হয় তা হলো বাংলাদেশ বিষয়াবলি আর আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি/ সাম্প্রতিক ঘটনাবলি । এর জন্য খুব ভালোভাবে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের সবগুলো সংখ্যা (যা উল্লেখ করলাম) আর কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের বিশেষ সংখ্যাটা পড়ুন ।

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের বিগত মাসের সংখ্যাগুলো কেন সংগ্রহ করতে বলেছি তার কারণ হলো সেখানে পিএসসি/ ব্যাংকসমূহ কিংবা অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের যে পরীক্ষাগুলো হয় সেগুলোর প্রশ্নও দেয়া থাকে। অনেক বছর এমনও দেখা যায় যে সেসব প্রশ্ন থেকেও কিছু প্রশ্ন চলে আসে।

পরীক্ষার মাসখানেক সময়কাল থেকে খবরের কাগজটা পড়ুন। এখন তো অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপসের মাধ্যমে বাসায় পত্রিকা না রেখেও পড়া যায়, বিশেষ দরকারি তথ্যগুলো মোবাইলেই পারলে নোট করে রাখুন । সেটাও কষ্ট লাগলে স্ক্রিনশট দিয়ে রাখুন (যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন)।

স্মার্টফোন ব্যবহার না করলেও সমস্যা নেই, দেখা যায় যারা পত্রিকার পাতা ঘেটে পড়েন কিংবা কোনো জরুরি তথ্য দাগিয়ে রাখেন, কেটে সংগ্রহ করেন কিংবা ডায়েরি/ খাতায় লিখে রাখেন তাদের সে জিনিস আরও বেশি মনে থাকে।

একটানা কোনো বিষয় পড়তে যাবেন না, বোরিং ফিল করবেন। যেমন- আপনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস কম পারেন, এইটা নিয়ে এখন দিনের পর দিন পড়ে থাকলে দেখবেন পড়া এগুচ্ছে না। তো কি করা যাবে?

এটার ফাঁকে ফাঁকে সহজ লাগে কিংবা মজা লাগে এমন কিছু একটা পড়বেন। মনে থাকে না কিংবা বার বার পড়েও ভুলে যাচ্ছেন এমন হলে সেটা একটা কাগজে লিখে রাখুন। বাসায় পত্রিকা পড়লে যেখান থেকে কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন পেলেন সেটা আরেকটা জায়গায় লিখুন, দরকারে দেখে দেখেই লিখুন, সমস্যা নেই।

গণিতভীতি যাদের তাদের জন্য রেগুলার এক আধটু প্র্যাকটিস করাটা জরুরি, অংক হাতে না করে শুধু দেখে গেলে অনেকেই ভুল করেন কিংবা পরীক্ষার হলে কনফিউজড থাকেন ।

ইঞ্জিনিয়ারিং/ম্যাথ/ফিজিক্স/স্ট্যাটিস্টিক্স ব্যাকগ্রাউন্ড এর যারা কিংবা যারা MBA করেছেন তাদের জন্য এই সাবজেক্ট খুব চ্যালেঞ্জিং না। দুই নম্বরে যে বইটার কথা বললাম ওখানের ম্যাথ সেকশনে এবং প্রফেসরসের স্পেশাল বইটার ম্যাথ সেকশনেও দেখবেন পাটিগণিত আর জ্যামিতি/ ত্রিকোণমিতি নিয়ে শর্টকাটে সূত্র কিংবা টেকনিক দেয়া আছে।
সেগুলো এ্যাপ্লাই করে কিছু অংক করুন। কেবল সূত্র মুখস্ত রেখে পরীক্ষার হলে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে।

মানসিক দক্ষতা নিয়ে বাজারে বেশকিছু বই এখন পাওয়া যায় তবে আমার কাছে এজন্য আহামরি কিছুই দরকার বলে মনে হয় নি, আগের বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে আর এ বইগুলোর কথা বললাম ওগুলোর সংশ্লিষ্ট সেকশনে প্র্যাকটিস করলে আপনি পারবেন।
সাধারণ বিজ্ঞান অনেকে মনে করেন অনেক সোজা, পরে পচা শামুকে পা কাটে অনেকের। এজন্য শর্ট ডাইজেস্টটা আর প্রফেসর্সের বইটা পড়ুন ভালোমতো। আর কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও বিভিন্ন প্রযুক্তির শর্ত কাট নাম জানেন কিন্তু ফুল মিনিং জানেন না, সেগুলোও জেনে নিন, বানান সহ কিন্তু ।

সবশেষে আবারও বলবো ৩০-৪০ দিন প্রস্তুতির জন্য অনেক সময়। শুধুমাত্র আপনি মুখস্ত করে প্রিলি পাস করে আসবেন এটা সবার জন্য হয় না। বুদ্ধি খাটান, মনে রাখবেন বিসিএস প্রিলিতে আপনি ভুল দাঁগালে কিন্তু অর্ধেক মার্ক কাটা যাবে, সুতরাং ক্যালকুলেটেড রিস্ক নিতে হবে।

আর আরেকটা কথা সবারই জানা, এই মার্কস আপনার মূল মার্কসের সাথে যোগ হবে না, সুতরাং এখানে উতরে যাবার জন্য আপনাকে দুনিয়ার সবকিছুই পাড়তে/ জানতে হবে না।

অনেক এমসিকিউ প্রশ্ন আপনি না জেনেও প্রসেস অফ ইলিমিনেশন (কোনটি উত্তর হবে না সেটা বাছাই করে করেও) কিছু মার্কস পেতে পারেন।

Note: লেখাটি সংগৃহীত; তবে আমি যেখান থেকে নিবন্ধটি পেয়েছি সেখানেও লেখকের নাম বা পরিচয় উল্লেখ না থাকায় আমিও তা উল্লেখ করতে পারলাম না।


স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program

No comments:

Post a Comment