আসিফ ইমতিয়াজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গ্র্যাজুয়েশন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভূক্ত ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছেন তিনি। এরপর ৩৭তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারভূক্ত হয়েছেন তিনি।
সম্মিলিত মেধা তালিকায় অধিকার করেছেন ৭ম স্থান। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে জীবনে সফলতার নানা দিক নিয়ে কথা বলেন আসিফ ইমতিয়াজ। পরামর্শ দেন ৪০তম বিসিএসপ্রার্থীদের জন্য। সেই পুরাতন সাক্ষাৎকারটিই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এখানে তুলে দেওয়া হলো।
সাক্ষাৎকারে আসিফ ইমতিয়াজ বলেছেন, ‘প্রত্যেক মানুষের পড়ার নিজস্ব স্টাইল থাকে। সেভাবেই পড়ুক। তবে ফোকাস যেন নড়ে না যায়। ফোকাসটা হলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রিস্ক মিনিমাইজ করা।’ তার ভাষ্য, সামনে ৪০তম বিসিএস। এখন রিভিশনের সময়। নিজের দুর্বলতাকে বুঝতে শিখে সেখানে জোর প্রয়োগ করা যেতে পারে। আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। সব বলে ব্যাট চালানো যাবেনা। কিছু বল ছেড়ে খেলতে হবে। সাধারণ জ্ঞান নিয়ে বেশি মাতামাতির দরকার নেই। কারণ, এমনও হতে পারে ৬ মাস সাধারণ জ্ঞান পড়লেন কিন্তু পরীক্ষায় তার কিছুই আসলো না।’ পুরো সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো→
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অন্যদিকে বিসিএস মেধাক্রমে ৭ম স্থান (ফরেন ক্যাডার) অধিকার— সফলতার রহস্য কী?
আসিফ ইমতিয়াজ: শুধুই পরম করুণাময় আল্লাহর ইচ্ছা। আমি শুধু চেষ্টা করেছি নিজের প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন ঠিকমত করতে। আমি চেয়েছি আমার কারণে যেনো কখনো আমার বাবা-মা’কে কষ্ট পেতে না হয়। নিয়মিত পড়ালেখার মাঝে থাকতে চেষ্টা করেছি। হাতের কাছে যা পেয়েছি তাই পড়তে চেষ্টা করেছি। চোখের সামনে যা দেখেছি, তার কিছুটা গভীরে ঢুকতে চেয়েছি। মনের ডাক শুনেছি। ছাত্রজীবনে পৃথিবীকে ক্লাসরুমের বাইরে এসে বোঝার জন্য কখনো টিউশনি করেছি, কখনো চার বন্ধু মিলে আন্ডারগ্রাউন্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছি, কখনো আমার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর সাথে কাপড়ের ব্যবসা করেছি। ক্ষুদ্র এই জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতাটা কাজে লেগেছে। আত্মবিশ্বাসটা অনেক জরুরী। আরও বেশি জরুরী হলো নিজের দুর্বলতা বুঝতে পারা। আমি নিজের দুর্বলতাকে কিছুটা হলেও বুঝতে পারি। এই বোধটাই আমার শক্তি। আমার মা, আমার বাবা আর এখন যোগ হয়েছেন আমার স্ত্রী— আমার যাবতীয় কাজের এই তিন অনুপ্রেরণা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, কোনদিকে থাকবেন?
আসিফ ইমতিয়াজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকেই বেছে নিচ্ছি। ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার চেয়ে ইতিহাস স্রষ্টাদের তৈরি করার চেষ্টাকে প্রাধান্য দিচ্ছি। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা যদি আমার দেয়া জীবনবোধ আর শিক্ষার কিছুটা অংশ নিজেরা ধারণ করতে পারে আর দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর; তাতেই আমার সুখ নিহিত থাকবে। আমি উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টাতে মনোযোগ দিতে চাই। এখন তারই পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে যাচ্ছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু পরামর্শ দিন।
আসিফ ইমতিয়াজ: এখন রিভিশনের সময়। নিজের দুর্বলতাকে বুঝতে শিখে সেখানে জোর প্রয়োগ করা যেতে পারে। আত্নবিশ্বাসী হতে হবে। সব বলে ব্যাট চালানো যাবেনা। কিছু বল ছেড়ে খেলতে হবে। আমার ধারণা অংক, মানসিক দক্ষতা, বিজ্ঞান, আইসিটি, বাংলা আর ইংরেজি পার্থক্য গড়ে দেবে। সাধারণ জ্ঞান নিয়ে বেশি মাতামাতির দরকার আছে বলে মনে হয়না। এমন হতে পারে আমি ৬ মাস সাধারণ জ্ঞান পড়লাম কিন্তু পরীক্ষায় তার কিছুই আসলো না। তাই সাধারণ জ্ঞানের ম্যাক্সিমাইজেশন কখনো সম্ভব না, রিস্ক মিনিমাইজেশনে মন দিতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রিলিমিনারিতে মূল সমস্যা কোথায় হয়? তা ওভারকাম করার উপায় কী?
আসিফ ইমতিয়াজ: প্রিলিমানারির মূল সমস্যা হলো এটি অনেকটাই ভাগ্য-নির্ধারিত। খুব ভালো প্রস্তুতি প্রিলিমিনারি পাসের নিশ্চয়তা দেয় না। ভাল প্রস্তুতি আর ভালো পরীক্ষার পার্থক্য আছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কয়েকটি বিষয়ে বেশি মন দিতে গিয়ে ভূগোল, দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা, নৈতিকতা সুশাসন ইত্যাদি বিষয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া যায় না। আমার মতামত হলো, যেকোন তিনটে বিষয়ে সর্বজ্ঞ না হয়ে সব বিষয়েই উতরে যাওয়ার মতো দক্ষতা অর্জন। প্রিলিমিনারি কোনো পাণ্ডিত্য-প্রকাশক পরীক্ষা না, স্মার্টলি চিন্তা করে অল্প ক্লেশে পার হয়ে আসার পরীক্ষা। নিজেকে পরীক্ষক হিসেবে কল্পনা করে পড়লে আমার ধারণা অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দেয়া সহজ হয়ে যায়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস-এর বিষয়ভিত্তিক কিছু পরামর্শ দিন।
আসিফ ইমতিয়াজ: এই বিষয়ে অনেক আলোচনা ইতোমধ্যেই হয়েছে। অন্তর্জালে সবই সহজলভ্য। আমি একটু অন্য কথা বলি। প্রত্যেক মানুষের পড়ার নিজস্ব স্টাইল থাকে। সেভাবেই পড়ুক। তবে ফোকাস যেন নড়ে না যায়। ফোকাসটা হলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমি আমার রিস্ক মিনিমাইজ করবো। একটি মূল গাইডের সাথে দুটি আলাদা পাবলিশারের ডাইজেস্টের প্রয়োজনীয় অংশ পড়লে আশা করি কাজ চালানো যাবে। বিসিএসের যেহেতু নির্দিষ্ট কোন সিলেবাস নেই, তাই কেউ যদি বলে আমার সিলেবাস শেষ, তাকে নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে বিসিএসে একটা জিনিস খুব কাজে লাগে। তা হলো পূর্ববর্তী জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার Accumulation.
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএসে ভালো করতে কী ধরণের রুটিন মেনে চলা উচিত, আপনার রুটিন কী ছিল?
আসিফ ইমতিয়াজ: আমি প্রিলিমিনারির জন্য ৪৫ দিন পড়েছি। প্রায় দশ ঘণ্টা করে। প্রথম দশ-পনেরো দিন নিজেকে বিচার করেছি। পরের বিশ-পঁচিশ দিন ভিত শক্তিশালী করেছি। তবে অসুস্থতার কারণে রিভিশন দিতে শেষ দুইদিন। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। লিখিত পরীক্ষার জন্য বেশ কষ্ট করেছি। প্রায় ৪০ দিন টানা পড়ালেখা করেছি। তবে ওই যে বললাম সঞ্চিত এবং লব্ধ জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা দিয়ে লিখিত পরীক্ষা পাস করেছি। অংক আর মানসিক দক্ষতা খুব ভাল দিয়েছিলাম। বাংলাদেশ বিষয়াবলি লেখা শুরু করেছিলাম সংবিধান দিয়ে। যা লিখেছি একদম সুস্পষ্ট করে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই লিখেছি। অকাজে কালি এবং কাগজ অপচয় করিনি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অনুজদের জন্য কিছু অনুপ্রেরণা দিন।
আসিফ ইমতিয়াজ: প্রতিটি মানুষই অসাধারণ। প্রত্যেকের সামর্থ্য আছে দুর্দান্ত কিছু করার। শুধু বুঝতে হবে নিজের মন আর মাথাটা একদিকে কাজ করছে কিনা। যদি করে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। যদি না করে থাকে, সাহস করে অচলায়তনটা ভাঙ্গার চেষ্টা করতে হবে। যারা সফল, তারা আজ পাঠাওয়ের মালিক, বেসিসের চেয়ারম্যান, বিখ্যাত ফ্রিল্যান্সার, চমৎকার ডেটা এনালিস্ট। নিজেকে ছোট ভাবা যাবেনা।দেশ আমাকে কী দিলো না ভেবে আমি দেশকে কি দিতে পারি ভাবতে হবে। নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে হবে। স্কিল থাকলে সুযোগ আসবেই। আমি অনেক সাধারণ জ্ঞান পারি— এটা কোন স্কিল না। আমি খুব ভালো ওয়েব ডিজাইন জানি- এটা অবশ্যই দক্ষতা। অনেকে বলবে— এগুলো বলতেই সম্ভব আর শুনতেই সুন্দর। কিন্তু তারা চারপাশে ভাল করে চোখটা বুলালেই উত্তর পাবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ।
আসিফ ইমতিয়াজ: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।
(দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস থেকে সংগৃহীত)
স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program
No comments:
Post a Comment