Sunday, September 20, 2020

যেভাবে পড়লে এক মাসেই ৪১তম বিসিএসে চান্স সম্ভব!


এই লিখাটি মূলত বিসিএস প্রিলিমিনারি নিয়ে প্রিপারেশন খুব ভাল নয় কিংবা চাকরি বা অন্য পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএস দেবেন বলে ঠিক করেছেন তাদের জন্য।

হাতে যদি ৩০-৪৫ দিন সময় থাকে তবে আত্মবিশ্বাসী হোন, প্রিলিতে উতরে যাওয়ার জন্য এটা পর্যাপ্ত সময়।

আমি ৩৩, ৩৪, ৩৫ তম প্রিলি তিনটিতেই অংশ নিয়েছিলাম এবং উত্তীর্ণ হই সবগুলোতেই আল্লাহর রহমতে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি।
এই সময়টাতে আপনি যে রিডিং ম্যাটেরিয়ালসগুলো কালেক্ট করবেন:
বিগত বছরের প্রশ্ন সম্ভার (নীলক্ষেতে গেলেই পাবেন, সেগুলো সলভসহ পাবেন, ৩০-৫০ টাকা নিবে দাম)

এসিউরেন্স/ ওরাকল/ MP3 এদের যেকোনোটার শর্ট একটা ডাইজেস্ট ৮০-১২০ টাকা নেবে, ১৫০-২০০ পৃষ্ঠার ছোট একটা বই, এখানে মূলত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিএসসির পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়নের উপর ভিত্তি করে সবগুলো বিষয় নিয়েই প্রশ্নোত্তর থাকে। বড় ডাইজেস্টগুলোর মতো কিংবা সাবজেক্ট ওয়াইজ আলাদা বইগুলোর মতো অতো ডিটেইলস না। যারা অলরেডি সাবজেক্ট ওয়াইজ আলাদা বই কিনে পড়েছেন তাদের এটা না কিনলেও চলবে।

প্রফেসর'স প্রকাশনী প্রিলির আগ দিয়ে একটা বই বের করে, স্পেশালি বিসিএস ক্যান্ডিডেটদের জন্য, এইটা খুব খুব খুব উপকারি। আমি ৩৫ তম প্রিলিতে কেবলমাত্র এটা পড়ে প্রিলির প্রিপারেশন নিয়েছিলাম।

কারণ একই সময়ে ৩৪ তম'র ভাইভা চলছিল, ভাইভার প্রিপারেশন নিতে গিয়ে আলাদা করে ৩৫ এর প্রিলির জন্য পড়তে পারি নি । তবে কেউ এটা পড়েই প্রিলিতে টিকে যাবেন সেই আশা করবেন না ।

আমার ক্ষেত্রে ভাগ্য এবং আগের দুই প্রিলির হালকা পাতলা প্রিপারেশন এর কারণে আমি কেবল এটার ভরসা করে গিয়েও উতরে যেতে পেরেছিলাম। দাম নেবে ৫০ টাকা, তবে এটার চাহিদা প্রচুর থাকে বিধায়, ক্রাইসিস ক্রিয়েট হলে অনেক বেশি দামেও কেনা লাগতে পারে।

যে মাসে পরীক্ষা হবে সেই মাসসহ তার আগের ৩-৪ মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স/ কারেন্ট ওয়ার্ল্ড।
আমি ৩৫তম দিতে গিয়ে সবচেয়ে খারাপ করেছি ইংরেজি লিটারেচারে। এর থেকে আমার মনে হয়েছে এর জন্য আলাদা করে একটু প্রিপারেশন নেয়াটা উচিত। নীলক্ষেতে বিসিএস/ ব্যাংক কিংবা আরও এই জাতীয় পরীক্ষাগুলোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়/ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারদের ইংরেজি সাহিত্যের উপর সামারি টাইপ ছোট ছোট বুকলেট টাইপ বই পাওয়া যায়; ৩০-৫০ টাকা নেবে। এগুলোতে ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন কাল, কে কোন কালের সাহিত্যিক, কার লিখা কী ধর্মী, বিখ্যাত বই কে কি লিখে গেছেন এসব পাওয়া যাবে।
আর ইংরেজি শব্দার্থ, বিপরীতার্থক এসব নিয়ে যাদের দুর্বলতা তারা সাইফুর'স/মেন্টর'স কিংবা বিসিএস+ব্যাংক প্রিপারেশনের জন্যেই কমন কিছু শব্দের বই পাওয়া যায়, সংগ্রহে রাখতে পারেন। ঘাবড়াবেন না, বিসিএসে আপনাকে GRE স্ট্যান্ডার্ড Vocabulary দিতে যাবে না।

কীভাবে পড়া উচিত?
আমি শুরুতেই বলেছি লিখাটা হচ্ছে যাদের হাতে সময় কম, প্রিপারেশন এতোদিনে খুব ভাল নিতে পারেন নি তাদের জন্য।
আমি শুরুতেই পরামর্শ দিবো, আগে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখুন, সেগুলো না পারলে/ না জানা থাকলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমি সাজেস্ট করবো, প্রথমে যে বইটির কথা বলেছি সেটার বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ, গণিত, দুই ভাষার সাহিত্য এগুলো অবশ্যই পড়ে শিখে ফেলুন।

যেগুলো কঠিন মনে হচ্ছে সেগুলো আপাতত অন্যকোনো কালির কলম বা মার্কার দিয়ে মার্ক করে রাখুন। আন্তর্জাতিক কিংবা বাংলাদেশের জেলা/ থানা'র সংখ্যা টাইপ খুব পুরাতন প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারেন, মানে যেগুলো আপনি জানেন ২৮ তম বিসিএস এর সময় যেই সংখ্যা ছিল, এখন পরিবর্তন হয়েছে সেগুলো আর কি।

আপনি যদি মিনিমাম ১০-১২ টি বিগত বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন সলভ করে ফেলেন, তাহলে দেখবেন আপনার মধ্যে প্রিলির বিষয়ে খুব ভালো ধারণা চলে এসেছে যে কী ধরণের প্রশ্ন হতে পারে। এখন আপনার একটু ডিটেইলস পড়ার সময় । যদি না আপনি বাংলা সাহিত্য/ ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র/ছাত্রী হয়ে থাকেন, তবে আপনার জন্য বাংলা-ইংরেজি সাহিত্য জিনিসটা একটু কঠিন হবেই ।

অনেকের কাছে এগুলোর চেয়ে আন্তর্জাতিক বা বাংলাদেশ বিষয়াবলি কঠিন লাগে । আপনি যেহেতু বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখেছেনই, আপনি নিজেকে বিচার করুন, কোনটিতে আপনার দুর্বলতা বেশি, সেটির উপরে জোর দিন।

♦ আমার একটি কমন অবজারভেশন: যারা ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা তারা সাধারণত সাহিত্যিক/কাল/বইপত্র এসবের নামে দুর্বল হয় । মেডিকেলে ৫ বছর পড়ে মানুষজন গণিত এর সাধারণ নিয়মগুলো ভুলে যান, সাথে বাংলা ব্যাকরণ তো আছেই। আর্টস কিংবা কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে যারা প্রথম বারের জন্য এটেম্পট নিচ্ছেন অনেকের গণিত আর ইংরেজিভীতি থাকে।

তবে সবার কমন এক জায়গাতে কমবেশি প্রবলেম হয় তা হলো বাংলাদেশ বিষয়াবলি আর আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি/ সাম্প্রতিক ঘটনাবলি । এর জন্য খুব ভালোভাবে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের সবগুলো সংখ্যা (যা উল্লেখ করলাম) আর কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের বিশেষ সংখ্যাটা পড়ুন ।

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের বিগত মাসের সংখ্যাগুলো কেন সংগ্রহ করতে বলেছি তার কারণ হলো সেখানে পিএসসি/ ব্যাংকসমূহ কিংবা অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের যে পরীক্ষাগুলো হয় সেগুলোর প্রশ্নও দেয়া থাকে। অনেক বছর এমনও দেখা যায় যে সেসব প্রশ্ন থেকেও কিছু প্রশ্ন চলে আসে।

পরীক্ষার মাসখানেক সময়কাল থেকে খবরের কাগজটা পড়ুন। এখন তো অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপসের মাধ্যমে বাসায় পত্রিকা না রেখেও পড়া যায়, বিশেষ দরকারি তথ্যগুলো মোবাইলেই পারলে নোট করে রাখুন । সেটাও কষ্ট লাগলে স্ক্রিনশট দিয়ে রাখুন (যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন)।

স্মার্টফোন ব্যবহার না করলেও সমস্যা নেই, দেখা যায় যারা পত্রিকার পাতা ঘেটে পড়েন কিংবা কোনো জরুরি তথ্য দাগিয়ে রাখেন, কেটে সংগ্রহ করেন কিংবা ডায়েরি/ খাতায় লিখে রাখেন তাদের সে জিনিস আরও বেশি মনে থাকে।

একটানা কোনো বিষয় পড়তে যাবেন না, বোরিং ফিল করবেন। যেমন- আপনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস কম পারেন, এইটা নিয়ে এখন দিনের পর দিন পড়ে থাকলে দেখবেন পড়া এগুচ্ছে না। তো কি করা যাবে?

এটার ফাঁকে ফাঁকে সহজ লাগে কিংবা মজা লাগে এমন কিছু একটা পড়বেন। মনে থাকে না কিংবা বার বার পড়েও ভুলে যাচ্ছেন এমন হলে সেটা একটা কাগজে লিখে রাখুন। বাসায় পত্রিকা পড়লে যেখান থেকে কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন পেলেন সেটা আরেকটা জায়গায় লিখুন, দরকারে দেখে দেখেই লিখুন, সমস্যা নেই।

গণিতভীতি যাদের তাদের জন্য রেগুলার এক আধটু প্র্যাকটিস করাটা জরুরি, অংক হাতে না করে শুধু দেখে গেলে অনেকেই ভুল করেন কিংবা পরীক্ষার হলে কনফিউজড থাকেন ।

ইঞ্জিনিয়ারিং/ম্যাথ/ফিজিক্স/স্ট্যাটিস্টিক্স ব্যাকগ্রাউন্ড এর যারা কিংবা যারা MBA করেছেন তাদের জন্য এই সাবজেক্ট খুব চ্যালেঞ্জিং না। দুই নম্বরে যে বইটার কথা বললাম ওখানের ম্যাথ সেকশনে এবং প্রফেসরসের স্পেশাল বইটার ম্যাথ সেকশনেও দেখবেন পাটিগণিত আর জ্যামিতি/ ত্রিকোণমিতি নিয়ে শর্টকাটে সূত্র কিংবা টেকনিক দেয়া আছে।
সেগুলো এ্যাপ্লাই করে কিছু অংক করুন। কেবল সূত্র মুখস্ত রেখে পরীক্ষার হলে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে।

মানসিক দক্ষতা নিয়ে বাজারে বেশকিছু বই এখন পাওয়া যায় তবে আমার কাছে এজন্য আহামরি কিছুই দরকার বলে মনে হয় নি, আগের বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে আর এ বইগুলোর কথা বললাম ওগুলোর সংশ্লিষ্ট সেকশনে প্র্যাকটিস করলে আপনি পারবেন।
সাধারণ বিজ্ঞান অনেকে মনে করেন অনেক সোজা, পরে পচা শামুকে পা কাটে অনেকের। এজন্য শর্ট ডাইজেস্টটা আর প্রফেসর্সের বইটা পড়ুন ভালোমতো। আর কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও বিভিন্ন প্রযুক্তির শর্ত কাট নাম জানেন কিন্তু ফুল মিনিং জানেন না, সেগুলোও জেনে নিন, বানান সহ কিন্তু ।

সবশেষে আবারও বলবো ৩০-৪০ দিন প্রস্তুতির জন্য অনেক সময়। শুধুমাত্র আপনি মুখস্ত করে প্রিলি পাস করে আসবেন এটা সবার জন্য হয় না। বুদ্ধি খাটান, মনে রাখবেন বিসিএস প্রিলিতে আপনি ভুল দাঁগালে কিন্তু অর্ধেক মার্ক কাটা যাবে, সুতরাং ক্যালকুলেটেড রিস্ক নিতে হবে।

আর আরেকটা কথা সবারই জানা, এই মার্কস আপনার মূল মার্কসের সাথে যোগ হবে না, সুতরাং এখানে উতরে যাবার জন্য আপনাকে দুনিয়ার সবকিছুই পাড়তে/ জানতে হবে না।

অনেক এমসিকিউ প্রশ্ন আপনি না জেনেও প্রসেস অফ ইলিমিনেশন (কোনটি উত্তর হবে না সেটা বাছাই করে করেও) কিছু মার্কস পেতে পারেন।

Note: লেখাটি সংগৃহীত; তবে আমি যেখান থেকে নিবন্ধটি পেয়েছি সেখানেও লেখকের নাম বা পরিচয় উল্লেখ না থাকায় আমিও তা উল্লেখ করতে পারলাম না।


স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program

প্রিলির জন্য দশ ঘন্টা করে ৪৫ দিন পড়েছি — বিসিএসের পররাষ্ট্রে ৭ম আসিফ


আসিফ ইমতিয়াজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গ্র্যাজুয়েশন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভূক্ত ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছেন তিনি। এরপর ৩৭তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারভূক্ত হয়েছেন তিনি।
সম্মিলিত মেধা তালিকায় অধিকার করেছেন ৭ম স্থান। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে জীবনে সফলতার নানা দিক নিয়ে কথা বলেন আসিফ ইমতিয়াজ। পরামর্শ দেন ৪০তম বিসিএসপ্রার্থীদের জন্য। সেই পুরাতন সাক্ষাৎকারটিই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এখানে তুলে দেওয়া হলো।

সাক্ষাৎকারে আসিফ ইমতিয়াজ বলেছেন, ‘প্রত্যেক মানুষের পড়ার নিজস্ব স্টাইল থাকে। সেভাবেই পড়ুক। তবে ফোকাস যেন নড়ে না যায়। ফোকাসটা হলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রিস্ক মিনিমাইজ করা।’ তার ভাষ্য, সামনে ৪০তম বিসিএস। এখন রিভিশনের সময়। নিজের দুর্বলতাকে বুঝতে শিখে সেখানে জোর প্রয়োগ করা যেতে পারে। আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। সব বলে ব্যাট চালানো যাবেনা। কিছু বল ছেড়ে খেলতে হবে। সাধারণ জ্ঞান নিয়ে বেশি মাতামাতির দরকার নেই। কারণ, এমনও হতে পারে ৬ মাস সাধারণ জ্ঞান পড়লেন কিন্তু পরীক্ষায় তার কিছুই আসলো না।’ পুরো সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো→

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অন্যদিকে বিসিএস মেধাক্রমে ৭ম স্থান (ফরেন ক্যাডার) অধিকার— সফলতার রহস্য কী?
আসিফ ইমতিয়াজ: শুধুই পরম করুণাময় আল্লাহর ইচ্ছা। আমি শুধু চেষ্টা করেছি নিজের প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন ঠিকমত করতে। আমি চেয়েছি আমার কারণে যেনো কখনো আমার বাবা-মা’কে কষ্ট পেতে না হয়। নিয়মিত পড়ালেখার মাঝে থাকতে চেষ্টা করেছি। হাতের কাছে যা পেয়েছি তাই পড়তে চেষ্টা করেছি। চোখের সামনে যা দেখেছি, তার কিছুটা গভীরে ঢুকতে চেয়েছি। মনের ডাক শুনেছি। ছাত্রজীবনে পৃথিবীকে ক্লাসরুমের বাইরে এসে বোঝার জন্য কখনো টিউশনি করেছি, কখনো চার বন্ধু মিলে আন্ডারগ্রাউন্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছি, কখনো আমার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর সাথে কাপড়ের ব্যবসা করেছি। ক্ষুদ্র এই জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতাটা কাজে লেগেছে। আত্মবিশ্বাসটা অনেক জরুরী। আরও বেশি জরুরী হলো নিজের দুর্বলতা বুঝতে পারা। আমি নিজের দুর্বলতাকে কিছুটা হলেও বুঝতে পারি। এই বোধটাই আমার শক্তি। আমার মা, আমার বাবা আর এখন যোগ হয়েছেন আমার স্ত্রী— আমার যাবতীয় কাজের এই তিন অনুপ্রেরণা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, কোনদিকে থাকবেন?
আসিফ ইমতিয়াজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকেই বেছে নিচ্ছি। ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার চেয়ে ইতিহাস স্রষ্টাদের তৈরি করার চেষ্টাকে প্রাধান্য দিচ্ছি। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা যদি আমার দেয়া জীবনবোধ আর শিক্ষার কিছুটা অংশ নিজেরা ধারণ করতে পারে আর দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর; তাতেই আমার সুখ নিহিত থাকবে। আমি উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টাতে মনোযোগ দিতে চাই। এখন তারই পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে যাচ্ছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু পরামর্শ দিন।
আসিফ ইমতিয়াজ: এখন রিভিশনের সময়। নিজের দুর্বলতাকে বুঝতে শিখে সেখানে জোর প্রয়োগ করা যেতে পারে। আত্নবিশ্বাসী হতে হবে। সব বলে ব্যাট চালানো যাবেনা। কিছু বল ছেড়ে খেলতে হবে। আমার ধারণা অংক, মানসিক দক্ষতা, বিজ্ঞান, আইসিটি, বাংলা আর ইংরেজি পার্থক্য গড়ে দেবে। সাধারণ জ্ঞান নিয়ে বেশি মাতামাতির দরকার আছে বলে মনে হয়না। এমন হতে পারে আমি ৬ মাস সাধারণ জ্ঞান পড়লাম কিন্তু পরীক্ষায় তার কিছুই আসলো না। তাই সাধারণ জ্ঞানের ম্যাক্সিমাইজেশন কখনো সম্ভব না, রিস্ক মিনিমাইজেশনে মন দিতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রিলিমিনারিতে মূল সমস্যা কোথায় হয়? তা ওভারকাম করার উপায় কী?
আসিফ ইমতিয়াজ: প্রিলিমানারির মূল সমস্যা হলো এটি অনেকটাই ভাগ্য-নির্ধারিত। খুব ভালো প্রস্তুতি প্রিলিমিনারি পাসের নিশ্চয়তা দেয় না। ভাল প্রস্তুতি আর ভালো পরীক্ষার পার্থক্য আছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কয়েকটি বিষয়ে বেশি মন দিতে গিয়ে ভূগোল, দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা, নৈতিকতা সুশাসন ইত্যাদি বিষয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া যায় না। আমার মতামত হলো, যেকোন তিনটে বিষয়ে সর্বজ্ঞ না হয়ে সব বিষয়েই উতরে যাওয়ার মতো দক্ষতা অর্জন। প্রিলিমিনারি কোনো পাণ্ডিত্য-প্রকাশক পরীক্ষা না, স্মার্টলি চিন্তা করে অল্প ক্লেশে পার হয়ে আসার পরীক্ষা। নিজেকে পরীক্ষক হিসেবে কল্পনা করে পড়লে আমার ধারণা অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দেয়া সহজ হয়ে যায়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস-এর বিষয়ভিত্তিক কিছু পরামর্শ দিন।
আসিফ ইমতিয়াজ: এই বিষয়ে অনেক আলোচনা ইতোমধ্যেই হয়েছে। অন্তর্জালে সবই সহজলভ্য। আমি একটু অন্য কথা বলি। প্রত্যেক মানুষের পড়ার নিজস্ব স্টাইল থাকে। সেভাবেই পড়ুক। তবে ফোকাস যেন নড়ে না যায়। ফোকাসটা হলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমি আমার রিস্ক মিনিমাইজ করবো। একটি মূল গাইডের সাথে দুটি আলাদা পাবলিশারের ডাইজেস্টের প্রয়োজনীয় অংশ পড়লে আশা করি কাজ চালানো যাবে। বিসিএসের যেহেতু নির্দিষ্ট কোন সিলেবাস নেই, তাই কেউ যদি বলে আমার সিলেবাস শেষ, তাকে নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে বিসিএসে একটা জিনিস খুব কাজে লাগে। তা হলো পূর্ববর্তী জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার Accumulation.

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএসে ভালো করতে কী ধরণের রুটিন মেনে চলা উচিত, আপনার রুটিন কী ছিল?
আসিফ ইমতিয়াজ: আমি প্রিলিমিনারির জন্য ৪৫ দিন পড়েছি। প্রায় দশ ঘণ্টা করে। প্রথম দশ-পনেরো দিন নিজেকে বিচার করেছি। পরের বিশ-পঁচিশ দিন ভিত শক্তিশালী করেছি। তবে অসুস্থতার কারণে রিভিশন দিতে শেষ দুইদিন। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। লিখিত পরীক্ষার জন্য বেশ কষ্ট করেছি। প্রায় ৪০ দিন টানা পড়ালেখা করেছি। তবে ওই যে বললাম সঞ্চিত এবং লব্ধ জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা দিয়ে লিখিত পরীক্ষা পাস করেছি। অংক আর মানসিক দক্ষতা খুব ভাল দিয়েছিলাম। বাংলাদেশ বিষয়াবলি লেখা শুরু করেছিলাম সংবিধান দিয়ে। যা লিখেছি একদম সুস্পষ্ট করে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই লিখেছি। অকাজে কালি এবং কাগজ অপচয় করিনি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অনুজদের জন্য কিছু অনুপ্রেরণা দিন।
আসিফ ইমতিয়াজ: প্রতিটি মানুষই অসাধারণ। প্রত্যেকের সামর্থ্য আছে দুর্দান্ত কিছু করার। শুধু বুঝতে হবে নিজের মন আর মাথাটা একদিকে কাজ করছে কিনা। যদি করে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। যদি না করে থাকে, সাহস করে অচলায়তনটা ভাঙ্গার চেষ্টা করতে হবে। যারা সফল, তারা আজ পাঠাওয়ের মালিক, বেসিসের চেয়ারম্যান, বিখ্যাত ফ্রিল্যান্সার, চমৎকার ডেটা এনালিস্ট। নিজেকে ছোট ভাবা যাবেনা।দেশ আমাকে কী দিলো না ভেবে আমি দেশকে কি দিতে পারি ভাবতে হবে। নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে হবে। স্কিল থাকলে সুযোগ আসবেই। আমি অনেক সাধারণ জ্ঞান পারি— এটা কোন স্কিল না। আমি খুব ভালো ওয়েব ডিজাইন জানি- এটা অবশ্যই দক্ষতা। অনেকে বলবে— এগুলো বলতেই সম্ভব আর শুনতেই সুন্দর। কিন্তু তারা চারপাশে ভাল করে চোখটা বুলালেই উত্তর পাবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ।
আসিফ ইমতিয়াজ: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।
(দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস থেকে সংগৃহীত)


স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program

Tuesday, September 1, 2020

যাদের লক্ষ্য #বিসিএস_৪১! - অধ্যয়ন ও করনীয়→


কী পড়বেন, কোথা থেকে পড়বেন বা কীভাবে পড়বেন ?

১. জব সলুশন ব্যাখ্যাসহ পড়ে ফেলুন। বিসিএস অংশ আগে পড়ুন। এতে করে Question Pattern সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন। কোন কোন চাকরিতে কী কী প্রশ্ন আসে তা বুঝতে পারবেন। প্রস্তুতিও অনেকাংশে হয়ে যাবে।
প্রফেসর'স এর জব সলুশন পড়তে পারেন।

২. ইংরেজির ভোকাবুলারির একটা বই কিনে পড়া শুরু করুন। ওরাকলের "Mnemonic Vocabulary" বইটা পড়তে পারেন।
গ্রামার অংশের জন্য A Brochure of English Grammar বইটা দেখতে পারেন। ৪৪ পৃষ্ঠার এই বইতে অনেক কিছুই জানতে পারবেন। দাম মাত্র ৩৫ টাকা।

৩. Preposition, Phrase, Substitution, Definition, Expression ইত্যাদি মুখস্থের বিষয়গুলো নিয়মিত পড়ুন। এগুলো English Apps বই থেকে পড়তে পারেন। প্রাকটিস করার জন্যও বইটা পড়তে পারেন।

৪. ইংরেজি সাহিত্য পড়ার সময় কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে রাখুন। BCS Confidence এর A Handbook on English Literature বইটা পড়তে পারেন। তবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ১০/১২ লেখক ২/৩ টা বই থেকে ভালো করে নোট করে নিবেন।

৫. ব্যাসিক ম্যাথ দিয়ে শুরু করুন। যেকোনো ব্যাসিক ম্যাথ মিনিমাম ২ বার শেষ করুন। খাইরুল'স ব্যাসিক ম্যাথ দিয়ে শুরু করতে পারেন।

৬. বাংলার জন্য লাল নীল দীপাবলি, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ ও অগ্রদূত বাংলা এই ৩ টা বই আগে পড়ুন।

৭. 'বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর' বই দিয়ে আন্তর্জাতিক শুরু করুন। এরপর MP3 পড়ুন। 

৮. বাংলাদেশ বিষয়াবলীর জন্য 'আমার দেখা রাজনীতির ৫০ বছর' বইটা দিয়ে শুরু করুন। এরপর MP3।
সবশেষে কনফিডেন্স এর সংক্ষিপ্ত সাধারণ জ্ঞান বইটা অবশ্যই পড়বেন।
বাংলাদেশ সংবিধান নিয়ে একটা বই পড়ে শেষ করুন। আরিফ খানের বইটা পড়তে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদগুলো হাফেজদের মতো মুখস্থ করে ফেলুন!

* সাধারণ জ্ঞানে ৭০+ মার্কস এবং পড়লে পারা যায়। তাই গুরুত্ব দিন এই সেক্টরে।

➤ সাম্প্রতিক তথ্যের জন্য এখন থেকে প্যারা না নিয়ে দায়িত্বটা নাইম ভাইয়ের উপর ছেড়ে দেন। পরীক্ষার আগে রিসেন্ট ভিউ নামে একটা বই বের হবে ওইটা পড়লেই যথেষ্ট। 

৯. সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর বইটা পড়ুন ৪৭-৭১ এর ধারাবাহিক ইতিহাসের জন্য। বইটা আকারে খুব ছোট কিন্তু তথ্যবহুল। 

১০. বিজ্ঞানের জন্য কনফিডেন্স এর সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞান বইটা পড়তে পারেন।

১১. কিছু মৌলিক ও মোটিভেশনাল বই পড়তে পারেন। যেমন: 
কোয়ান্টাম মেথড, ইউ ক্যান উইন, উইংস অব ফায়ার, পাওয়ার অব পজিটিভ থিংকিং, অসমাপ্ত আত্নজীবনীসহ আপনার চাহিদা অনুযায়ী কিছু বই।

১২. নিয়মিত পত্রিকা পড়ুন। বাংলা ও ইংরেজি উভয়ই। সম্পাকদীয় পেজ বেশি পড়ুন। 

১৩. যা পড়েছেন বা পড়ছেন তা নিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে আলোচনা করুন। 

১৪. উপরে উল্লেখিত বইগুলো আবার পড়ুন।
১৫. পরীক্ষার ১৫/২০ দিন আগে Assurance Digest পড়া শুরু করুন। 
বিবিধঃ
⇨ একই বিষয়ের পাঁচটা বই পাঁচবার না পড়ে একটা বই পাঁচবার পড়ুন।
⇨ সামনে যা দেখবেন তাই পড়বেন এই মনোভাব বাদ দেন।
⇨ নোট করে গুছিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন।
⇨ বই দাগিয়ে পড়ুন। 
⇨ এক জাতীয় তথ্যগুলো একসাথে পড়ুন। যেমনঃ পানি পথের তিন যুদ্ধের সাল, বাংলাদেশ কে নিয়ে কে কি বললেন যেমন কিসিঞ্জার, হিউয়েং সাং, জিয়া উদ্দিন ইত্যাদি। 
⇨ প্রণালী, সীমান্ত, নদী, সাগর-মহাসাগর ইত্যাদি ম্যাপ দেখে পড়ুন। এইভাবে কল্পনা করে পড়ুন যে, আপনাকে ভারত মহাসাগরে ছেড়ে দেওয়া হলো; যেতে হবে কৃষ্ণসাগরে সুয়েজ খাল ব্যবহার করে। কোন কোন সাগর, মহাসাগর, প্রণালী বা খাল পাড়ি দিয়ে যাবেন তা ম্যাপ দেখে জেনে নিন।
⇨ সিলেবাসের মোটামুটি ৮০% শেষ করুন।
⇨ দুনিয়ার সব কিছুই মুখস্থ করতে যাবেন না। কিছু কিছু টপিকের কনসেপ্ট ক্লিয়ার রাখতে বারবার রিডিং পড়ুন। আপনার কাছে বেশি কঠিন মনে হয় এই রকম কিছু টপিক বাদ দিতে পারেন তবে তা অবশ্যই মোট সিলেবাসের ১০% এর বেশি না।
⇨ একটা করে বই পড়া শুরু করবেন সেটা শেষ করে নতুন বই ধরবেন। প্রতিদিন তিনটার বেশি সাবজেক্ট পড়বেন না। ইংরেজি ভোকাবুলারি ও ম্যাথ প্রতিদিন পড়ুন।
⇨ প্রতি শনিবার বা অন্য যেকোনো একদিন রিভিশন দেওয়ার জন্য বরাদ্দ রাখুন। এই দিনে বিজ্ঞান, বাংলা সাহিত্যে, ইংরেজি সাহিত্য ইত্যাদি নিয়মিত রিভিশন দিবেন৷ বিগত সপ্তাহে যতটুকুই পড়েছেন ততটুকুই রিভিশন দিবেন।

© এম. নাহিদুল ইসলাম নাহিদ
ফাউন্ডার অব বিদ্যানহর লাইব্রেরি
বিজয় একাত্তর হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program

বিসিএস ম্যাথফোবিয়া | কী করবেন?


এই পরামর্শ যারা ম্যাথ পারেন না শুধু তাদের জন্য (যারা ম্যাথ পারেন তারা প্লিজ ১০০ হাত দূরে থাকুন)!

বিশ্বাস করুন আর নাই করুন ৩৫-৩৮ বিসিএস পর্যন্ত আমি ১৮৫ নাম্বারের পরীক্ষা দিয়েছি। 
আল্লাহর অশেষ কৃপায় কোন প্রিলিতে বাদ পড়িনি।
আমি জানতাম ১৫ টি ম্যাথের মধ্যে না পারলেও আমি ৫/৬ টা পেরে যাব। তাই হয়েছে। 

ক্যাডার হতে চান?
শর্টকাট ম্যাথ নয় লিখিতের প্রস্তুতি নিয়ে ম্যাথ করুন। 

ধরুন আপনি ম্যাথ পারেন না। নো টেনশন। প্রিলি ম্যাথে সময় দিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। আর কিছু বিসিএস প্রার্থী রয়েছেন যাদের ধরে বেঁধে ম্যাথের বই গিলে খাওয়ালেও ম্যাথ পারবেন না। তাদের জন্যই এই পোস্ট। 

সাপোজ, আপনি ম্যাথ পারেন না। প্লিজ, ম্যাথের বইয়ে মাথা গুজে সময় এবং মাথা কোনটাই নষ্ট করবেন না। অন্য ১৮৫ নাম্বারে মনোযোগ দিন। কারন প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য আপনি ১ নম্বরই পাবেন। ম্যাথের ১ টি সঠিক উত্তরের জন্য ২ কিন্তু পাওয়ার সুযোগ নেই। অন্য বিষয়ে ম্যাথের সময়টা ঢেলে দিন। 

আপনার দরকার প্রিলিতে ১২৫/১৩০!

আর লিখিত! 
প্রিলি পাস করার পর ৯ম-১০ম শ্রেণীর বইটা ৩/৪ মাস প্রাইভেট পড়ে নিন। অথবা ছোট ভাই বোনের কাছে প্রাইভেট পড়ে নিন। 
অথবা যে ম্যাথ পারে তাকে নিয়ে গ্রুপ স্টাডি করুন। 
তাও না পারলে কি আর করা টাডা মুখস্থ করে ফেলুন আর প্র‍্যাক্টিস করুন। আমার ধারনা আপনি অন্তত ৫/৭ দিনে প্র‍্যাক্টিস করা ম্যাথগুলো ভুলে যাবেন না। লিখিত পরীক্ষা দিয়ে পরে ম্যাথ সারা জীবনের জন্য ভুলে যান। ভাইরে ক্যাডার হতে হলে একটু তো কষ্ট করতেই হবে। 

উল্লেখ্য, এটা আমার টেকনিক আমি নিজেও ম্যাথ পারিনা, আমি লিখিততে ম্যাথে পেয়েছি মাত্র ২৬! যারা ম্যাথ পারেন তারা প্লিজ ১০০ হাত দূরে থাকুন। 

আপনার টার্গেট থাকবে ৫০ এর মধ্যে ৩০/৩৫! 
২০/২৫ পাবেন ইনশাআল্লাহ।

৩৫ বিসিএসে আমার এক কাছের ছোট ভাই লিখিত ম্যাথে ১৫ পেয়ে এডমিন এ সম্ভবত ৩৯ তম হয়েছে। 
৩৬ বিসিএস এ ৪/৫ জনকে চিনি যাদের ম্যাথের নাম্বার ৩০ এর নিচে কিন্তু জেনারেল ক্যাডার পেয়েছে। এডুকেশন ১৫/২০ জনের নাম্বার দেখেছি। যাদের ম্যাথের নাম্বার ২০-২৫!

ম্যাথের প্রব্লেম জাতীয় প্রব্লেম। আজ আপনি ম্যাথ পারেন না বলে হতাশায় ভুগছেন তাদের জন্য এই পোস্টটা পাথেয় হবে ইনশাল্লাহ।

আর বাকি ৮৫০ নাম্বারে ঝাপিয়ে পড়ুন! 

আর প্রত্যেক প্রার্থীর কোন না কোন স্ট্রং সাইড থাকে। সেটাকে অবহেলা না করে যুদ্ধের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ুন।। 

বিঃদ্রঃ এই পোস্টটা শুধু বিসিএস স্বপ্নচারীদের জন্য, অথবা যাদের প্রয়োজন একটা ক্যাডার কিংবা মাথা উচু করে বাঁচার।

শুভ কামনায়। 
Shakil Al-Amin
৩৬তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত।


স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program

বুক রিভিউ : দ্য ক্যাডার — বিসিএস পরীক্ষা প্রস্তুতি কৌশল: শুরু থেকে শেষ


এটি বিসিএস প্রস্তুতির প্রথম কোনো পূর্ণাঙ্গ পরামর্শের বই। এতে বিসিএস প্রস্তুতির এ-টু-জেড সকল বিষয়ের উপরে পরামর্শ রয়েছে।
এছাড়াও এই বইয়ের লেখকের রয়েছে বিসিএস বিষয়ক ওয়েবসাইট www.BCSExam.com


স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program

যারা প্রথমবার বিসিএস দিবেন তাদের জন্য

বিসিএস নিয়ে যা যা জানা প্রয়োজন: যারা প্রথমবার বিসিএস দিবেন তাদের জন্য: বিসিএস একটা দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা। সার্কুলার থেকে প্রিলি, রিটেন, ভাইভা, নিয়োগ পর্যন্ত ২.৫-৩ বছর সময় লাগে। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক টেনশন, হতাশা আসবে কিন্তু ধৈর্য ধরতে হবে। বিসিএস এর অনেকগুলো ধাপ: প্রিলি, রিটেন, ভাইভা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভেরিফিকেশন (পুলিশ, এনএসআই, ইউএনও, স্পেশাল ব্রাঞ্চ), গেজেট, পোস্টিং।

♦ ফরম পূরণ:— ১. টেকনিক্যাল ক্যাডার ও বোথ ক্যাডার। যারা শুধুমাত্র টেকনিক্যাল ক্যাডার দিবেন তাদের চয়েস একটাইঃ বিসিএস(স্বাস্থ্য), রসায়ন, গণিত ইত্যাদি। আর যারা বোথ ক্যাডার দিবেন তারা প্রথমে প্রশাসন, ফরেইন, পুলিশ, ট্যাক্স ইত্যাদি দিবেন, এরপর স্বাস্থ্য/নিজের সাবজেক্ট। ২. ফরম পূরনের সময় স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা একই দিলে ভালো। না হয় দুই জায়গায় ভেরিফিকেশন হবে। তবে স্থায়ী ঠিকানায় বাড়ি বা জমি থাকতে হবে। স্থায়ী ঠিকানা পরে পরিবর্তনের সুযোগ নাই। ৩. নাম, বাবার নাম, জন্মতারিখ ইত্যাদি এস এস সি সার্টিফিকেট অনুযায়ী দিতে হবে। ৪. স্নাতক লিখিত পরীক্ষা শেষ হলেই Appeared সার্টিফিকেট দিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা যায়।

♦ প্রিলিমিনারী পরীক্ষা: ১. প্রিলিতে সবার জন্য পাস মার্ক/কাট মার্ক একই। অর্থাৎ কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে যে ১০-১২ হাজার প্রিলিতে টিকবে আপনাকে এর মধ্যে একজন হতে হবে। এখানে কোনো ধরনের কোটা/আলাদা কাট মার্ক এপ্লাই করা হয় না, তাই সেই লেভেলের প্রস্তুতি নিতে হবে। ২. প্রিলি একটি বাছাই পরীক্ষা। এই নাম্বার পরবর্তীতে যোগ হবে না। তাই ১ম হয়ে প্রিলি পাস করা আর ১০,০০০ তম হয়ে প্রিলি পাস করা একই কথা।

♦ রিটেন পরীক্ষা: ১. যারা বোথ ক্যাডারে দিবেন তাদের জন্য পরীক্ষা হল ১১০০ নাম্বারের। আর যারা শুধুমাত্র ট্যাকনিকাল/শুধুমাত্র জেনারেল ক্যাডার তাদের ৯০০ নাম্বারের পরীক্ষা। ট্যাকনিকালদের বাংলা ২য় পত্র ও বিজ্ঞান পরীক্ষার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট ট্যাকনিক্যাল বিষয়ে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। বোথ ক্যাডারদের জেনারেল ক্যাডারের সব বিষয় সাথে নিজ বিষয়ের ২০০ নম্বরের পরীক্ষা। ২. লিখিত পরীক্ষা পাস নম্বর গড়ে ৫০%। সবাইকে অবশ্যই ৫০% মার্কস পেতে হবে ভাইভা দেওয়ার জন্য। আপনার ক্যাডারে যত সিটই থাকুক আপনি যদি রিটেনে ৫০% মার্কস না পান, তাহলে আপনি রিটেনে ফেল। তবে শুধুমাত্র ৫০% মার্কস ক্যাডার প্রাপ্তি নিশ্চিত করে না। যত বেশি মার্ক পাবেন রিটেনে তত ক্যাডার প্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়বে। ৩. রিটেন পরীক্ষায়ও কোন ধরনের কোটা/আলাদা কাট মার্ক এপ্লাই করা হয় না। ৪. কোনো পরীক্ষায় ৩০% এর কম পেলে ওই সাবজেক্টের নাম্বার যোগ হবে না। ৫. বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল লিখিত পরীক্ষা। এখানে যে যত বেশি পাবে, তার ক্যাডার পাওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়বে।

♦ ভাইভা: ১. ভাইভা পরীক্ষা ২০০ নম্বরের, পাস মার্ক ১০০। ভাইভা বোর্ডে ৩ জন পরীক্ষক থাকেন। ১ জন পিএসসির মেম্বার, বাকি দুজন বাইরের এক্সটারনাল। ২. যারা জেনারেল/বোথ ক্যাডারে ভাইভা দিবেন তাদের এক্সটারনাল যে কোন বিষয়ের হতে পারে। ৩. যারা শুধুমাত্র ট্যাকনিক্যাল ক্যাডারে ভাইভা দিবেন, তাদের বোর্ডে সংশ্লিষ্ট সাবজেক্টের দুইজন এক্সটারনাল থাকবেন। যেমনঃ স্বাস্থ্য দুজন ডাক্তার(যে কোন সাবজেক্টের), গণিতে দুই জন গণিতের শিক্ষক ইত্যাদি। ৪. ভাইভার উপর ক্যাডার প্রাপ্তি নির্ভর করে না। কারণ ভাইভাতে বেশিরভাগই পাস করে এবং এভারেজ একটা নাম্বার পায়। অল্প কিছু পরীক্ষার্থী খুব ভাল ভাইভা মার্কস পান। নিজেকে সাধারণ ভাবুন। ধরে নিন এভারেজ ভাইভা দিবেন, কিন্তু অসাধারন রিটেন দেওয়ার প্রস্তুতি নিন। ৫. কোনো ধরনের তদবির থেকে দূরে থাকুন। বিসিএস ই একমাত্র চাকুরি যা তদবির ছাড়া পাওয়া যায়। ৬. রিটেন ও ভাইভার প্রাপ্ত নাম্বার যোগ করে কোটা এপ্লাই করে চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়া হয়।

♦ স্বাস্থ্য পরীক্ষা: চূড়ান্ত ফলাফলের কিছুদিন পর অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ /ইন্সস্টিটিউট এ হয়। ওজন, উচ্চতা, প্রশ্রাব, চক্ষু ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সাধারণত কেউ বাদ পড়ে না।

♦ ভেরিফিকেশন: ১. পুলিশ, এনএসআই, ইউএনও, স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইত্যাদি সংস্থা ভেরিফিকেশন করে। এখানে দেখা হয় কোনো মামলা আছে কিনা, রাজনৈতিক পরিচয় নিজের এবং আত্মিয়স্বজনের, স্থায়ী ঠিকানা ঠিক আছে কি না, স্কুল, কলেজ ও মেডিকেল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় এ ও ভেরিফিকেশন করা হয়। ২. মামলা থাকলে ভেরিফিকশনে বাদ যাবে। ৩. বিরোধী রাজনৈতিক দলের কেউ হলে নিজে কিংবা ফ্যামিলি তাহলে বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা। এগুলো আগে থেকেই যেকোনোভাবে ম্যানেজ করতে হবে। ৪. কোটাধারীদের কোটা সংক্রান্ত কাগজপত্র খুব ভালভাবে যাচাই, বাচাই করা হয়। ৫. অনেকে মনে করেন ট্যাকনিকাল (স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ইঞ্জিনিয়ারিং) ক্যাডারের জন্য ভেরিফিকেশন সহজ। আসলে তা নয়। একই ব্যক্তিই এক এলাকায় সব ক্যাডারের ভেরিফিকেশন করেন, তাই সব ক্যাডারে সমানভাবেই সব যাচাই বাচাই করা হয়।

♦ গেজেট: সব রিপোর্ট ওকে থাকলে তারপর সরকারী গেজেটে নিজের নাম দেখা যাবে।

♦ জয়েনিং: ১. গেজেট দেওয়ার ১৫-৩০ দিনের মধ্যে নিজ মন্ত্রণালয়ে জয়েন করা লাগে। ২. মন্ত্রণালয়ে জয়েনিং এর পর কর্মস্থলে জয়েনিং এর জন্য আলাদা গেজেট প্রকাশিত হয়। এটা মন্ত্রণালয়ে জয়েনিং এর ৭ দিনের মধ্যে হয় সাধারণত।

এতগুলো প্রসিডিউর সফলভাবে শেষ করতে পারলে তবেই আপনি বিসিএস ক্যাডার। গুরুত্বপূর্ণ হল রিটেন পরীক্ষা, রিটেনে ভাল নাম্বার পেলেন তো আপনি ক্যাডার হওয়ার পথে অনেকদূর এগিয়ে গেলেন। এরপর যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল ভেরিফিকেশন। মামলা যদি থেকে থাকে যেকোনোভাবে মামলা তুলে নেওয়ার/সমাধান করার চেষ্টা করুন। রাজনৈতিক বিরোধ মিটমাট করুন। ভেরিফিকেশন শুরু হওয়ার আগে প্রতিবেশী /এলাকাবাসীকে /চেয়ারম্যান-মেম্বার এদের হাতে রাখুন। তো স্বপ্নের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য আজকে থেকেই শুরু করুন প্রস্তুতি।শুভকামনা সবার জন্য।

© ডা. আমিনুল ইসলাম সিলেট মেডিকেল কলেজ, ২০০৭-০৮ ৩৪ ও ৩৫ তম বিসিএস উত্তীর্ণ।

Facebook  | YouTube

স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program

Wednesday, August 26, 2020

তিনটি শর্ত পূরণ করতে পারলেই আপনি বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেন!

বিসিএস ক্যাডার হতে চাইলে আপনাকে ৩ টি শর্ত পূরণ করতেই হবে। আমি এগুলোকে বিসিএস পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার 'রুলস অব থাম (Rules of thumb)' বলে থাকি।

প্রথম যে শর্তটি পূরণ করতে হবে সেটি হচ্ছে, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাটা জাগিয়ে রাখা। আমাদের কিশোর বয়সে একটা কথা প্রচলিত ছিল- 'সিনেমা দেখার টাকা ভুতে যোগাড় করে দেয়!' আসলেই সত্য কথা। তবে পূর্বশর্ত হচ্ছে, সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার তীব্র ইচ্ছাটা থাকা চাই।

বিসিএস প্রস্তুতি কৌশলের উপর লেখা আমার বই 'দ্য ক্যাডার : বিসিএস পরীক্ষা প্রস্তুতি কৌশল-শুরু থেকে শেষ’- এ আমি ব্রাজিলিয়ান লেখক 'পাওলো কোয়েলহো'র বিখ্যাত The Alchemist গ্রন্থ থেকে একটি কোটেশন ব্যবহার করেছি। কোটেশনটি এমন-

'তুমি যদি কোন কিছু পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা পোষণ করো, মহাবিশ্বের সবকিছুই ষড়যন্ত্র শুরু করে দেবে তোমাকে সেটি পাইয়ে দিতে'।

তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোন অর্জনের পথে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কোনোকিছু পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আপনাকে বাধ্য করবে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পেতে যা যা করা দরকার তা তা করতে। সেটা রুটিন মেনে পড়াশুনা করা হোক বা হিমালয়ের চূড়ায় উঠার কঠিন প্রশিক্ষণ নেওয়াই হোক।

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলতে সর্বাগ্রে নিজের আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে। নিজের সামর্থ্যের লেভেলটা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে, ধারণা থাকতে হবে কোন ধরনের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে এবং কোন মাত্রার পড়াশুনা করলে বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায়।

আপনার হয়তো বিসিএস ক্যাডারদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড বা রেজাল্ট নিয়ে অহেতুক ভুল ধারণা আছে। প্রথমত, জেনে নিন- সবচেয়ে বেশী বিসিএস ক্যাডার হয় সাধারণত মধ্যম-মেধাবী পরীক্ষার্থীরা যাদের যেকোন পর্যায়ে একাডেমিক ফলাফল বা সিজিপিএ মধ্যম মানের বা সাধারণ মানের। স্নাতক পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণি পেয়ে অনেকেই বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। আমার এক ছোটভাই সাধারণ সরকারি কলেজ থেকে পাসকোর্সে ডিগ্রি পাশ করে তারপর প্রিলি-মাস্টার্স করে বর্তমানে বিসিএস ট্যাক্স ক্যাডারের মতো ভালো একটি ক্যাডারে চাকরি করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে শুধু আমারই ৬ জন ছাত্র খুব ভালো ভালো ক্যাডারে চাকরি পেয়েছে।

পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টমস ও কর ক্যাডারসহ বিভিন্ন ক্যাডারে আমার ছাত্র, সাবেক সহকর্মী, ও আত্নীয়স্বজন মিলে প্রায় শখানেক পরিচিত বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা আছেন যারা তাদের একাডেমিক পরীক্ষাগুলোতে খুব ভালো রেজাল্ট করেননি বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়/সাধারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন।

বিসিএস পরীক্ষার মোট ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১১০০নম্বরের পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় পরীক্ষক বা পিএসসি’র কেউ জানতে পারেন না কোন পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট কী বা কে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করেছে। ভাইভার ২০০ নম্বরের মধ্যে যদি আপনাকে অল্প নম্বর দিয়েও পাশ করানো হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে কমপক্ষে ৮০ নম্বর (পাশ-মার্কস) দিতে হবে। এখন বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির অসংখ্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয় বিধায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভাইভাতে বাদ পরার সম্ভাবনা কম এবং যেকোনো একটি বিসিএস ক্যাডার বা নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ৬০ থেকে ৮০%।

বিসিএস পরীক্ষা টেস্ট ক্রিকেটের মতো। পরীক্ষার কোনো একটি বা দু’টি বিষয়ে খারাপ করলে অন্যান্য বিষয়ে ভালো করে সফল হওয়ার সুযোগ আছে। শুধু এটার পেছনে লেগে থাকতে হবে এবং বুদ্ধিদীপ্ত পরিশ্রম করতে হবে। আমি বলে থাকি, ‘Don’t work hard, work smart and hard’. এটা সত্য যে, কোনো কিছু পাওয়ার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা থাকলে আপনার সেটা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। যেকোন অবস্থায়ই নিজেকে Motivated রাখুন। সফলতা আসবে।

দ্বিতীয় শর্তটি হচ্ছে, আপনাকে পরিকল্পিত পরিশ্রম করতে হবে। চাকরি পেতে পরিশ্রম অনেকেই করে, কিন্তু উপযুক্ত পরিশ্রম ক’জন করে? অনেকেই একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করেই নিজেকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার যোগ্য মনে করে।

চাকরির পড়াশুনার সাথে একাডেমিক পড়াশুনার অনেক পার্থক্য আছে। তাই অনার্স পড়াকালীন একাডেমিক পড়াশুনার ফাঁকেফাঁকে চাকরিপ্রাপ্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করে চাকরির জন্য পড়াশুনা শুরু করলে চাকরি পেতে পেতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স প্রায় শেষ হয়ে আসবে। আপনি যদি একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করার দু’বছরের মধ্যে চাকরি না পান তবে আপনার মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্বিক শূন্যতা কাজ করবে, এক ধরনের বেদনাবোধ ও অস্থিরতা আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াবে।

এই সংকট কাটাতে অনার্স শেষবর্ষ পরীক্ষা দিয়েই চাকরির পরীক্ষার জন্য কঠিন প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে। ঠিক করতে হবে আপনার বিসিএস পরীক্ষা প্রস্তুতির অব্যর্থ কৌশল। আমি যখন আমার সিলেট ক্যান্টনমেন্টের আবাসিক কোয়ার্টারের আশেপাশে জগিং করতে যেতাম তখন সেনাদের প্রশিক্ষণ এলাকায় অবস্থিত একটা পাহাড়ের চূড়ায় খুব বড় করে লেখা একটা মেটাল-সাইন দেখতে পেতাম। তাতে লেখা ছিল, ‘কঠিন প্রশিক্ষণ, সহজ যুদ্ধ’।

আসলেই সত্য কথা। কঠিনভাবে প্রস্তুতি নিলে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা সহজ হয়ে যায়। যেকোন প্রতিযোগিতার জন্যই কথাটা প্রযোজ্য।

উক্ত পাহাড়টির পাদদেশের শুটিং রেঞ্জে লেখা ছিল, ‘Shoot to kill’ অর্থাৎ ‘হত্যা করতেই গুলি করো’। আপনাকেও বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্যই সিরিয়াসলি বিসিএস পরীক্ষা দিতে হবে। ৬০ ভাগ বিসিএস পরীক্ষার্থী অযথাই ক্যাজুয়্যালী বিসিএস পরীক্ষা দেয়। অনেকে শুধু ভাগ্য বা দৈব’র উপর ভর করেই আধো-প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দিতে যায়। এটা শুধু সময়ের অপচয় মাত্র। অন্তত নিজের সক্ষমতার সবটুকু দিয়ে কঠোর প্রস্তুতি নিয়েই বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া উচিৎ। এভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে এই বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারবেন যে, আপনি সামর্থ্য অনুযায়ী অন্তত চেষ্টাটা করেছেন।

আমার অনেক বন্ধুই ভালো ক্যাডারে চাকরি পাওয়ার সকল সামর্থ্য থাকলেও আত্ববিশ্বাসহীনতা আর দায়সারা প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কারণে ক্যাডার সার্ভিসে চাকরি পাননি। অথচ অসংখ্য সাধারণ মেধার শিক্ষার্থীকে দেখেছি শুধু পরিশ্রম আর লেগে থাকার কারণে বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেছে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বিসিএস পরীক্ষার জন্য যারা খুব পরিশ্রম করে তারা বিসিএস ক্যাডার হতে না পারলেও অন্য যেকোন প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি পেয়ে যায়। বিশ্বাস করুন, যারা বিসিএস কর্মকর্তা হয়েছেন তাদের অন্তত ৪০ ভাগ খুব সাধারণ মানের ছাত্র আর অসাধারণ পরিশ্রমী ছিলেন।

তৃতীয় শর্তটি হচ্ছে, আপনাকে প্রস্তুতি-কৌশল ঠিক করতে Feasibility Study-তে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে।

আমি আমার লেখা ‘দ্য ক্যাডার’ বইয়ের ভূমিকার শুরুতেই লিখেছি, ‘প্রতিযোগিতায় টিকে থাকে তারাই যারা কৌশলী ও পরিশ্রমী’। আপনি যত শক্তিশালী বা মেধাবীই হোন না কেন, কৌশল ঠিক না করে কোনো যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরলে সে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯%, সেটা যত তুচ্ছ যুদ্ধই হোকনা কেন। আপনাকে অবশ্যই বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, সিলেবাস ও আপনার সক্ষমতা স্টাডি করতে হবে। সঠিকভাবে সঠিক বইটি পড়তে হবে। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অনেক পরীক্ষার্থীরই সিস্টেম-লসের কারণে প্রচুর সময়ের অপচয় হয় যা অপূরণীয়। আপনি যদি ভাবেন, পরীক্ষা দিতে দিতেই প্রস্তুতির কৌশলটা রপ্ত করে ফেলবেন, তা হলে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি পেতে পেতে আপনার জীবন-নদীতে অনেক জল গড়িয়ে যাবে এবং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০ বছর পর্যন্ত করার আন্দোলনে আপনিও শামিল হবেন!

আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়ার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর কৌশল কোনটি? আমি উত্তর দিব, অন্তত চার-পাঁচজন বিসিএস কর্মকর্তার লিখিত পরামর্শ গ্রহণ করা। হ্যাঁ, আপনাকে বিসিএস প্রিলিমিনারি, লিখিত, ভাইভা, পুলিশ ভেরিফিকেশন, স্বাস্থ্যপরীক্ষা, ফরম পূরণ ও ক্যাডার চয়েজের কৌশলের উপর বিভিন্ন ক্যাডারের বিভিন্ন একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের চার-পাঁচজন কর্মকর্তার লিখিত পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

নিম্নলিখিত যেকোনো একটি উৎস থেকে নিতে পারেন এই পরামর্শ:

ক. বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের লেখা পরামর্শগুলো পড়তে পারেন। অনেক কর্মকর্তাই মাঝেমধ্যে বিভিন্ন টপিকের উপর লিখে থাকেন। এতে একটা ধারণা পাবেন। তবে এগুলো বিচ্ছিন্নভাবে লেখা পোস্ট। একসাথে সবগুলো ধাপের এবং সব বিষয়ের প্রস্তুতি কৌশলের উপর গোছানো কোনো লেখা গ্রুপগুলোতে বা অনলাইনে নেই। এটা সম্ভবও নয়।

অথবা (বিকল্প উৎস)-খ. আমার লেখা ‘দ্য ক্যাডার: বিসিএস পরীক্ষা প্রস্তুতি কৌশল-শুরু থেকে শেষ’ বইটি পড়তে পারেন। আমি বিভিন্ন ক্যাডারের অন্তত ২০জন কর্মকর্তাকে ইন্টারভিউ করে এবং আরও প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তা কর্তৃক অনলাইনে ও পত্রিকায় লেখা বিসিএস প্রস্তুতির উপর পরামর্শ এনালাইসিস করে এবং নিজে দু’বার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে নবীন বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য ‘দ্য ক্যাডার’ বইটি লিখেছি। নবীন(Beginners) বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য বিসিএস পরীক্ষার ফরম পূরণ, সঠিকভাবে ক্যাডার চয়েজ, প্রিলিমিনারি, লিখিত, ভাইভা, স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও পুলিশ-ভেরিফিকেশন এর প্রাক-প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে ‘দ্য ক্যাডার’ বইয়ে বিস্তারিত লিখেছি।

বিসিএস পরীক্ষার সবগুলো ধাপের সব বিষয়ের প্রস্তুতি কৌশলের উপর লিখিত এটি বাংলাদেশে প্রথম-প্রকাশিত বই। প্রতিটি লেখাই বিভিন্ন ক্যাডার সদস্যদের পরামর্শ এনালাইসিস করে ও আমার নিজের বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা। গত ৯ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে প্রাকাশিত হওয়ার পর থেকে বইটি ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত একটানা বাংলাদেশে বই বিক্রির ১ নম্বর ই-কমার্স সাইট Rokomari.com-এ টপ-সেলার তালিকায় আছে।

শেষকথা: বিসিএস ‘নন-ক্যাডার নিয়োগ (বিশেষ)বিধিমালা-২০১০ ও সংশোধিত বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগ(বিশেষ) বিধিমালা-২০১৪ পাশ হওয়ায় সরকারি প্রথম ও ২য় শ্রেণির অনেক পদেই এখন বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১০ সালের আগে নন-ক্যাডারে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হতো না। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে বেতন দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় বিসিএস ক্যাডার, নন-ক্যাডার(প্রথম শ্রেণি) ও নন-ক্যাডার ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিগুলো খুবই আকর্ষণীয় চাকরি হয়ে গেছে।

তাই সময় নিয়ে প্রস্তুতির সলিড একটা পরিকল্পনা করে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিন।

সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য কখন শুরু করবেন প্রস্তুতি?

উত্তর হচ্ছে-‘Now or never’ অর্থাৎ এখনই শুরু না করলে আর কখনোই হয়তো প্রস্তুতি শুরু করার উপযুক্ত সময় পাবেন না।

যত আগে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবেন, অনার্স পাশ করার পর তত তাড়াতাড়ি সরকারি চাকরিটা পেয়ে যাবেন।

আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।

Facebook  | YouTube

স্বপ্ন যখন বিসিএস | BCS Preparation Program